৮ মেঘা উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

‘রূপকল্পকার’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১৪ এপ্রিল ২০২২, ২০:৩৩

দেশে বড় বড় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার মধ্যে আটটি মেগা প্রকল্পের কাজের অগগ্রতি হয়েছে ৬৮ ভাগ। এসব প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলে দেশের মানুষ দেখতে পাবে ‘এক বদলে যাওয়া দেশ’।
দেশের এই মহা-উন্নয়নের ‘রূপকল্পকার’ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সার্বক্ষণিক তদারকিতে এসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
এই মহাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের কাজ। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমার সংলগ্ন ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে পুরোদমে।
সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া আট মেগা প্রকল্পের বাকিগুলোর কাজও চলছে জোরেশোরে। এগুলো হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর।
এই মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আগামী জুনের দিকে উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্শা সেতুর। আর বছরের শেষ প্রান্তে ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের দৌঁড়াবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ মেট্রোরেলের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, অগ্রাধিকার পাওয়া এই মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৬৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে প্রকল্পটি। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৯১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৫ শতাংশের বেশি। আগামী জুনে যানচলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হর্ওয়ার কথা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় ৪৯ হাজার ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে, আর ভৌত অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
এগিয়ে ২০১২ সালের জুলাই থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনে। শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭১ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশে। তবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ পরবর্তী সময়ে যুক্ত হওয়ায় এ অংশ নির্মাণে প্রকল্পটি সংশোধন করার কারণে ব্যয় বাড়ছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।
৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি। এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৫৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৪ দশমিক ৯৯ শতাংশে, ভৌত অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।
৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে প্রকল্পটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৫ দশমিক ২০ শতাংশ।
১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে চলছে কাজ। এই প্রকল্পে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৬০ কোটি ০৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭২ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই প্রকল্পটি। এর মেয়াদ শুরু হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৩৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, তবে ভৌত অগ্রগতির পরিমাণ অনেক বেশি প্রায় ৬৮ শতাংশ।
মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতি আরেক ধাপ উচ্চতায় পৌঁছাবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও এসব প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখবে।’ 
মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি আরো বেড়ে যাবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকল্পগুলো তদারকি করা হচ্ছে। খুবই কম সময়ের মধ্যে পুরো জাতি পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সুফল পাবে বলে আমরা আশাবাদী।’