লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুরুতেই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে। নিজের নামে জমি ও বাড়ি আছে এমন ব্যক্তিদের নামে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সচ্ছল ব্যক্তিরা ওই সব ঘরে বসবাস না করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন ঘরগুলো।
প্রতিটি ঘর ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে। কিছু ঘর বিক্রি হয়েছে একাধিকবার।
সম্প্রতি উপজেলার চরকাদিরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
একই চিত্র অন্যান্য ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পেও। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস ও ভূমি অফিসের কর্তাদের ম্যানেজ করেই সরকারি ঘর বেচা-কেনার মহোৎসব চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় তিন ব্যক্তি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি ধাপে উপজেলার চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, কালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে ৮২০টি ঘর নির্মাণ করে কমলনগর উপজেলা প্রশাসন।
নির্মাণকাজের মধ্যেই ঘর বরাদ্দের জন্য ভূমি ও গৃহহীনদের আবেদন নেওয়া হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে তাদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।
চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর ক্রয় করে বসবাসকারী দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, এ আশ্রয়ণের মোট ১৮টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। ২৪৮ নম্বর ঘরটিতে মাইমুনা বেগম বসবাস করছেন, তিনি শিরিন বেগমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকায় কিনেছেন। ১৯৪ নম্বর ঘরটি ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে আবদুল মান্নান থেকে আব্দুল হান্নান কিনেছেন।
১৭৭ নম্বর ঘরটি ফাতেমার নামে থাকলেও ক্রয় করে বসবাস করেন তার আরেক আত্মীয়। ১৭৫ নম্বর ঘরটি সেলিম স্বর্ণকারের নামে হলেও ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে তার ভাতিজা আনোয়ার বসবাস করছেন। ১৭৪ নম্বর ঘরটি কুলসুম-মাকসুদ দম্পতি বিক্রি করেছেন ইসমাইলের কাছে। ১৭১ নম্বর ঘরটি ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন নুরে আলম। ৩১৫ নম্বর ঘরটি রহিমা বেগমের নামে বরাদ্দ হলেও ঘরটি কিনে পরিবার নিয়ে থাকেন মনির হোসেন। এ ছাড়া ৩১৭ নম্বর ঘরটিতে মাসে ৮০০ টাকায় লিংকন নামের একজন পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকেন।
২৪৮ নম্বর ঘর বিক্রি করা শিরিন বেগম ও ৩১৫ নম্বর ঘর বিক্রি করা রহিমা বেগম জানান, কলোনিতে থাকলে তাদের বাড়ি-ঘর দেখাশোনা করবে কে? তাই তারা সরকারি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। সরকারি ঘর বিক্রি করার বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আবুল খায়েরের সহধর্মিণী সুমি বেগম বলেন, ‘৫৫টি ঘরের মধ্যে ১৮টি ঘর ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।’
উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন যাচাই-বাছাই করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের টাস্কফোর্স নামে একটি কমিটি ছিল। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ইউএনও এবং সদস্যসচিব ছিলেন এসি ল্যান্ড স্যার। ওনাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আমরা ভূমি ও ঘর বন্দোবস্ত নথি রুজু করে ইউএনও স্যারের কাছে প্রেরণ করি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্ব ছিল আমাদের। কিন্তু তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন এসি ল্যান্ড ও ইউএনও স্যারের। ওনারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (অতিরিক্ত) (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, ‘সরকারি ঘর বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যারা এগুলো করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। বিভিন্ন মাধ্যমে এগুলো শুনছি। আমি দু-এক দিনের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করব।’