শেখ হাসিনা ও পরিবারের নামে প্লট বরাদ্দের নথির খোঁজ নেই

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৫

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ছয়টি প্লট বরাদ্দের নথি পাওয়া যায়নি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত পাঁচটি নথি পাওয়া গেলেও শুধু দ্বিতীয় নথিটি পাওয়া যায়নি। যে নথিতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্লট বরাদ্দের নির্দেশনা ছিল। ফলে ওই নথিতে কারা স্বাক্ষর করেছেন, তা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। তবে এই ছয়টি প্লট বরাদ্দের নথির আগে-পরে অন্যান্য প্লট বরাদ্দের নথিতে শেখ হাসিনা ও তার একান্ত সচিব-১ স্বাক্ষর করেন। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দের নথিতে শেখ হাসিনা ও তার এপিএস-১ সালাহ উদ্দিন স্বাক্ষর করেছেন। তাই এপিএস-১ সালাহ উদ্দিনকে আসামি করার সুপারিশ করা হবে।
এ ছাড়া প্লট বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে আসামি করার সুপারিশ করা হবে। শিগগিরই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশসহ কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দের তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একান্ত সচিব-১ শাখায় রক্ষিত প্লট বরাদ্দের হদিস না পাওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি টিম গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দুদকে একটি প্রতিবেদন ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের নামে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত পাঁচটি নথি পাঠানো হয়। একটি নথি পাঠানো হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদকের চাহিত নথিটি সংরক্ষিত ছিল প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের ১০৫ নম্বর কক্ষে, যা একান্ত সচিব-১-এর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাহিত নথিটি একই ধরনের পাঁচটি নথির সঙ্গে ফাইল কেবিনেটে সংরক্ষিত ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে নথিটির আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির পক্ষে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যে নথিটি পাওয়া যাচ্ছে না তাতে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বোনের মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট বরাদ্দের তথ্য রয়েছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় নথির ওই অংশ নষ্ট হয়ে গেছে অথবা আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এদিকে, মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। তারা হলেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার, সাবেক সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. অলিউল্লাহ, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভ‚মি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভ‚মি) মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য শফি উল হক, পরিচালক (এস্টেট ও ভ‚মি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভ‚মি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক হাবিবুর রহমান, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাহজারুল ইসলাম।
দুদকের তথ্যমতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গণপূর্ত ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের ক‚টনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা করে মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব প্লটের মোট মূল্য ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। গত বছর ২৫ ডিসেম্বর অভিযোগের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের নামে পৃথক ছয়টি মামলা করা হয়। প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়।