দেশজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদুল আজহা উদযাপিত

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ জুন ২০২৫, ২১:৪৭

দেশজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায় শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোরবানি দেন।
রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ঈদের উৎসব ছড়িয়ে পড়ে সকাল থেকেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গোরে শাহ মসজিদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাতে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
রাজধানী ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত ঈদের এই জামাতে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঈদের জামাত শেষে দেশের মঙ্গল কামনায় সবার কাছে দোয়া চান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সবাইকে আজ একসঙ্গে ঈদের জামাতে পেলাম। সবাইকে ঈদ মোবারক জানালাম। সবাই এ পবিত্র দিনে দেশের মঙ্গলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।
এবার কোরবানির পশু হিসেবে গরু, ছাগল, মহিষ ও উটসহ বিভিন্ন পশু কোরবানি দেন মুসলমানরা। রাজধানীর পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে কোরবানির মাংস ভাগাভাগি করে নেওয়ার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই অসহায় ও দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে ঈদের আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন।
এদিকে, ঈদের দিন ও তার আগের দিন দেশের মহাসড়কগুলোতে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সন্তোষজনক। এছাড়া কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে। ঢাকায় দুপুরের দিকেই বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়ে যায়।

রংপুর
সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জেলার প্রধান ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় ঈদের জামাত শুরু হয়। ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করেন রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো বায়েজীদ হোসাইন।
রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালসহ সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। খুতবা ও নামাজ আদায় শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

খুলনা
সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খুলনায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপ বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক খচিত ব্যানারে সজ্জিত করা হয়।
ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে। এ জামাতে ইমামতি করেন টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহম্মদ সালেহ। সকাল সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় জামাত খুলনা টাউন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা নসরুল্লাহ। এছাড়া সকাল ১০টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের প্রধান জামাতে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। নামাজ আদায় শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে মুসল্লিরা পরস্পর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
খুলনা আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে পৃথকভাবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। উপজেলাসমূহেও স্থানীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি উদ্যাপন করা হয়।

চট্টগ্রাম
সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মত্যাগের মাধ্যমে পশু কোরবানি দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিলীন হওয়া এবং ত্যাগের কিছু মহিমা আমরা যেন তাদের জন্য রাখতে পারি এটাই হোক আজকের দিনের প্রত্যাশা।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত নগরীর প্রধান ঈদ জামাত শেষে নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সিটি মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, কোরবানির ত্যাগের মহিমায় আমরা দুস্থ, অসহায়, গরির মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। কোরবানি পশু জবাইয়ের যে তিন ভাগ, তার এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরিব, দুস্থ, অসহায়ের জন্য এবং আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এই চিন্তা-ভাবনাটা যেন আমাদের সবার মাঝে থাকে।
মেয়র আরও বলেন, নগরীতে পশু কোরবানির পর দ্রুততম সময়ে কোরবানি পশুর বর্জ্য যাতে আমরা অপসারণ করতে পারি, বর্জ্য অপসারণে চার হাজার ২০০ জন কর্মচারী ও ১৬০টি বর্জ্য অপসারণ ট্রাক প্রস্তুত রেখেছি। নগরবাসীকে অনুরোধ করবো, কোরবানি পশু জবাই দেওয়ার সাথে সাথে বেশি করে পানি দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার রাখে এবং কোরবানি পশুর বর্জ্য যেখানে সেখানে না ফেলে করপোরেশন নির্ধারিত ডাস্টবিনে রাখে।
পবিত্র ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করেন খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরি। জামাত শেষে দেশ ও জাতির এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

রাজশাহী
সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেন।
এ দিনটি উপলক্ষে প্রতিবারের মতো রাজশাহী মহানগরীর হযরত শাহ্ মখদুম কেন্দ্রীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করেন নগরীর উপশহর নূর মসজিদের খতিব মাওলানা রুহুল আমিন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সাথে নগরীর শাহ্ মখদুম কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট
সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, ত্যাগের মহিমায় যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আজ সারাদেশের ন্যায় সিলেটে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদের জামাত আদায় শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেন। মূলত কোরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে মনের পশুকে বিসর্জন দিয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া।
সিলেটে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায় ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি জুনায়েদ আহমদ। জামাতের পূর্বে ঈদুল আজহার তাৎপর্যবিষয়ক বয়ান পেশ করেন একই মসজিদের খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খান।
শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।