বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দী। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তাকে মুক্ত করার জন্য কার্যত তেমন কোনো আন্দোলন করতে পারেননি দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সহসাই তার দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশের বাইরে থেকে বিএনপির মতো এত বড় একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন। এ কারণে দলের একটি অংশ তারেকের নেতৃত্ব মানতে নারাজ হলেও প্রকাশ্যে কেউই তা বলছেন না। তবে খালেদা জিয়ার নাতনি তারেক-কন্যা জাইমা রহমানের দলে নেতৃত্বের বিষয়ে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এককাট্টা। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান দেশে ফিরে এসে বিএনপির রাজনীতির হাল ধরুন। এ ব্যাপারে দলের অনেক সিনিয়র নেতারও সায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতারা তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে দলের নেতৃত্বে আনার জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া চান না জিয়া পরিবারের আর কেউ রাজনীতিতে এসে মামলা-হামলার মধ্যে পড়ুন। এ ছাড়া ঘরের বউ রাজনীতির মাঠে আসুক, এটাও তিনি পছন্দ করেন না। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর তারেক রহমানের সহসাই দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই, এটাও পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে আনার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জাইমার রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে খালেদা জিয়াও অনেকটা নমনীয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা জিয়া পরিবারের বাইরে অন্য কারও নেতৃত্ব মানতে নারাজ। নেতাকর্মীদের কাছে জিয়া পরিবারের একটি বিশেষ মর্যাদার অবস্থান রয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যদি দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে থাকেন, তাহলে বিএনপির হাল কে ধরবেন, বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা থাকলেও তা কোনোভাবেই জিয়া পরিবারের বাইরে নয়! এ ক্ষেত্রে জাইমার বিষয়ে বিএনপির সবার সুর এক। সবাই তাকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চান। এমনকি খুব দ্রুতই তিনি দেশে আসছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে উপদেষ্টা রেখে নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে নেতৃত্বে আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাইমাকে গড়ে তুলতে এখন থেকেই কাজ করার পরামর্শ তাদের। দলের নেতারাও মনে করেন, তরুণ নেতৃত্ব এলে সুদিন ফিরবে বিএনপিতে। এ জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের কাউন্সিল জরুরি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। তবে ৯ বছরের মধ্যে একটি কাউন্সিলও হয়নি। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কাউন্সিল করা যায়নি। মূল দলের আগে বিএনপির অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় দলটি। মূল দলের পুনর্গঠনের মাধ্যমে জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য রয়েছে।
জানা গেছে, বারবার নির্বাচন বর্জন ও আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকটাই হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। এতে করে দিন দিন বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এখন নেই মাঠের কোনো আন্দোলন এবং কোনো দিকনির্দেশনা। সব মিলিয়ে বিএনপি একটি নাজুক সময় পার করছে। দলটি কবে, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা কেউ বলতে পারেন না। চরম হতাশা নিয়ে বিএনপির নেতারা এখন সুদিন ফেরার আশায় বসে আছেন।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে না পারার মূল কারণ যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। তবে তারেক-কন্যা রাজনীতিতে এলে তাকে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করবেন সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন, নানা কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন। ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই। এতে দেশে দলের অভ্যন্তরে একধরনের নেতৃত্ব সংকট তৈরি হতে পারে। তাই তারেক রহমানের কন্যাকে নেতৃত্বে আনার কোনো বিকল্প নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, জিয়া পরিবারের বাইরে দলের নেতাকর্মীরা অন্য কারও নেতৃত্ব মেনে নেবে না। এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বে জিয়া পরিবারের বিকল্প নেই।