ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিভিন্ন জেলায় ৬ জনের মৃত্যু

রাজধানীতেও চলছে দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি 
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৭ মে ২০২৪, ১২:১৫

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। ফলে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। এছাড়া ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা। এরইমধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম বরিশালে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল রবিবার থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে ঘর ভেঙে দেয়ালচাপায় মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে ৬৫ বছর বয়সী শওকাত মোড়লের মৃত্যু হয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চরে আটকে পড়া নিজের ফুফু ও বোনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে তাদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন মো. শরীফ হাওলাদার (২৫) নামের এক যুবক।পথে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়। আজ রবিবার দুপুরে উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালের রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলের টিনের ওপর পড়ে দুইজন নিহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন-লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল জেড আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। 

রাজধানীতেও চলছে দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি 
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ মে) ভোর থেকে এ বৃষ্টি শুরু হয়।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর কর্মজীবীরা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন অনেকে। যদিও গণপরিবহনের খুব একটা দেখা মেলেনি। ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেশি দেখা গেছে। অনেককে রেইনকোট পরে ও ছাতা মাথায় হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
মোটরসাইকেলযোগে মহাখালী থেকে কুড়িলে আসা মামুন হোসেন জানান, বিশেষ কারণে আজ সকাল ৭টায় অফিসে থাকতে হচ্ছে। যে কারণে বৃষ্টি আর এমন দমকা বাতাসের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছি।
সকাল ৭টায় রাজধানীর নতুনবাজারে দেখা গেল যাত্রীছাউনিতে চার-পাঁচজনের জটলা। তারা জানালেন, বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। এই সময়টায় এমনিতেই গণপরিবহন কম থাকে। তার ওপর এমন বৃষ্টি। উপায় নেই। ৮টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে।
ছাতা মাথায় পথচারীদের বেশিরভাগই পোশাকশ্রমিক। তারা জানালেন, শিফট ডিউটি। সময়মতো না পৌঁছালে বিপদে পড়বেন। বেতন কাটা পড়বে। তাই এমন বৈরী আবহাওয়াতেও বের হয়েছেন তারা।
এদিকে বৃষ্টির কারণে সোমবার ভোর থেকেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজারের পাইকারি সবজি ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই সবজি কেনাবেচা রেখে বিভিন্ন ভবনের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেককে ভিজে ভিজে মালামাল বহন করতে দেখা গেছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।  
রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে।  
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে  অনেকে হয়ে পড়েছেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।