সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড র্যাবের ওপর তার সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সরাসরি বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল ও সমস্যার। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। গত তিন মাসে র্যাবের কার্যক্রমে আমরা উন্নতি দেখতে পেয়েছি। বিচারবহিভূর্ত হত্যা, গুম ও মানবাধিকার ইসু্যতে আমাদের উদ্বেগ এখনো রয়েছে। গতকাল রবিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড নেতৃত্ব দেন। সংলাপে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয় স্থান পায়।
গত ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও সংস্থাটির সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকার নানামুখী প্রচেষ্টা অভ্যাহত রেখেছে। গতকালের সংলাপে এ বিষয়ে জোর দেয় ঢাকা। এ ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নুল্যান্ড বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানিয়েছে এবং র্যাবের কার্যক্রমের আরো উন্নয়নের জন্য কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব।’
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, বৈঠকে উভয় পক্ষ কিছু বিষয়ে একে অপরকে ভালোভাবে বোঝা এবং নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেয়েছে। যেমন—র্যাব ও তার কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা বলেছি, এই নিষেধাজ্ঞা সরকারের সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের বিষয়েও বিস্তারিত জানিয়েছি। বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব এবং আশা করি বিষয়টা সময়মতো সমাধান হবে।’
এলিট বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবত্ রেখে দুই দেশের সম্পর্ককে বিস্তৃত করা কীভাবে সম্ভব, এমন প্রশ্নে নুল্যান্ড বলেন, ‘যখন মানবাধিকার ও মৌলিক আইনের লঙ্ঘন হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র কখনো চুপ করে থাকবে না। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আলোচনা অব্যাহত রাখব। কারণ আইনশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের অব্যাহত সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।’
রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, এই সংকটে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের হুমকি তৈরি হয়েছে। এখন পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশকে একসঙ্গে হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ‘আমরা একসঙ্গে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে পারব। ঐ অঞ্চলে শান্িত ও স্হিতিশীলতা বজায় রাখতে পারব।’
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যত্ সম্পর্ক কীভাবে দেখতে চায় ওয়াশিংটন জানতে চাইলে নুল্যান্ড বলেন, ‘বৃহত্ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। আমরা মনে করি, বাণিজ্য-ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাতে আমরা আরো কিছু করতে পারি। ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি উপাদান আছে এবং আমরা খুশি হব—বাংলাদেশ যেভাবে চায় সেভাবে এখানে অংশগ্রহণ করুক। সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়েও একসঙ্গে কাজ করা যায় এবং এটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ নিয়েও সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সম্ভব।’
আধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র কিনতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এ নিয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘জিসোমিয়া ও আকসা হচ্ছে, এটি নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রবেশদ্বার। আজ আমরা একটি খসড়া করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক কিছু করতে পারব।’
আগামী ৪ এপ্রিল দুই দেশ সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নুল্যান্ড বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ঐ দিন ওয়াশিংটনে দিবসটি উদ্যাপন করবেন এবং বৈঠক করবেন। এর বাইরে এ বছরই নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও ব্যবসা-বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।