টেক্সাসে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্দি সাইয়েদ মোহাম্মদ রাব্বানি। ১৯৮৮ সালের ২৫ জুলাই তাকে ডেথ রো-তে নেয় টেক্সাস কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তার TDCJ নম্বর ০২৪৭৪০৮৩ এবং রাজ্য আইডি ৯১০।
নথি বলছে, ১৯৮৭ সালের ৩০ নভেম্বর হিউস্টনের একটি কনভিনিয়েন্ট স্টোরে রাব্বানি তার রুমমেট জাকির কবীরকে (বয়স ২৪) গুলি করে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় আরেক বাংলাদেশি শিবলি খানের নামও অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছে, যদিও তার বর্তমান অবস্থান বা পরিণতি নিয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
রাব্বানি, যিনি 'পিন্টু' নামেও পরিচিত ছিলেন, নিজেকে একজন ওয়েটার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নথিতে তাকে বাংলাদেশি এবং ঢাকায় বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে। আশির দশকের প্রেক্ষাপটে এই হত্যাকাণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা মূলধারার বাংলাদেশি কমিউনিটির বাইরে রয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল সংরক্ষণ কিংবা প্রচারের কোনো সুযোগ তখন ছিল না। ফলে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বড় অংশই এত দিন এই ঘটনা সম্পর্কে জানতেন না।
তবে ৩৫ বছর পর এই পুরনো মামলায় এসেছে নতুন মোড়। সম্প্রতি টেক্সাসের সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালত রায় দিয়েছে—সাইয়েদ রাব্বানির শাস্তি সম্পর্কিত রায় নতুন করে শুনানি পাবে। কারণ, আগের বিচারপ্রক্রিয়ায় একাধিক গুরুতর ত্রুটি ছিল। সবচেয়ে বড় ত্রুটি ছিল মানসিক অসুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আমলে না নেওয়া।
জানা গেছে, রাব্বানি ১৯৯৪ সালেই আপিল আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হ্যারিস কাউন্টির আদালত প্রায় ৩০ বছর ধরে সেই আবেদন ‘নোটিস’ই করেনি। এই দীর্ঘ নীরবতা এখন আমেরিকার বিচার ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হ্যারিস কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসও এই ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, রাব্বানির সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তারা নতুন শুনানির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। যদি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন না করে, তবে রাব্বানি হয়তো ডেথ রো থেকে সরতে পারেন এবং প্যারোলের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
এই ঘটনাটি বিচারব্যবস্থার গভীর ত্রুটি, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার এক প্রতীক। ৩৫ বছর ধরে এক বাংলাদেশি অভিবাসী মৃত্যুর ছায়ায় বেঁচে থেকেছেন, অথচ তার আপিল আদালতের ডেস্কেই জমে ছিল তিন দশক। সাইয়েদ রাব্বানির জন্য আসন্ন শুনানি যেমন তার ব্যক্তিগত মুক্তির প্রশ্ন, তেমনি এটি বিচার, মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার একটি বড় পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।