ফ্লোরিডায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া, ঝুঁকিতে কারা?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩৯

প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াটির নাম ভিবরিও ভালনিফিকাস। এর বাস সমুদ্রের উষ্ণ পানিতে। ফ্লোরিডায় চলতি বছর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চার ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়া `মাংসখেকো’ ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে বলে জুলাইয়ে জানিয়েছে স্টেইটের হেলথ ডিপার্টমেন্ট।
এনবিসি নিউজ জানায়, প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াটির নাম ভিবরিও ভালনিফিকাস। এর বাস সমুদ্রের উষ্ণ পানিতে। ফ্লোরিডার উপকূলবর্তী কাউন্টিগুলোতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর মধ্যে আছে বে কাউন্টি, উপসাগরীয় উপকূলবর্তী হিলসবোরো কাউন্টি, যেখানে ট্যাম্পা অবস্থিত এবং দক্ষিণপূর্ব ফ্লোরিডার ব্রাউয়ার্ড কাউন্টি ও জ্যাকসনভিলের ঠিক দক্ষিণের সেন্ট জনস কাউন্টি।
যেভাবে ছড়ায় দেহে
স্টেইটের হেলথ ডিপার্টমেন্ট জানায়, চলতি বছর এ যাবত ১১টি ভিবরিও ভালনিফিকাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখেছে ফ্লোরিডা। সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি ব্যাকটেরিয়াটির সংক্রমণ প্রক্রিয়া জানিয়েছে।
সিডিসির মতে, চামড়ার উন্মুক্ত ক্ষতস্থান দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে ব্যাকটেরিয়াটি। এটি আশপাশের টিস্যুগুলোকে মেরে ফেলতে পারে। অবস্থাটি নেক্রোটাইজিং ফ্যাসিটিস বা মাংসখেকো রোগ হিসেবে পরিচিত।
দূষিত খাবার খেয়েও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন লোকজন। বিশেষত কাঁচা ঝিনুক থেকে এ ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে মানবদেহে। ফ্লোরিডায় লোকজন কীভাবে এ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিডিসির মতে, ভিবরিও ভালনিফিকাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঘটনায় প্রতি পাঁচজনে প্রায় একজনের মৃত্যু হয়।
কী বলেন গবেষক
ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার প্রকৌশলের অধ্যাপক অন্তরপ্রিত জুটলা গবেষণা করেছেন ভিবরিও ব্যাকটেরিয়া নিয়ে। তিনি জানান, এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এখনও বিরল। যদিও হারিকেনের পর এ ধরনের সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা থাকে।
গত বছর ফ্লোরিডায় সংক্রমণের ৮২টি ঘটনা ঘটে। চরম সক্রিয় হারিকেন মৌসুমের কারণে সংক্রমণের বৃদ্ধি ঘটে থাকতে পারে।
ভিবরিও ভালনিফিকাস কী?
ভিবরিও ব্যাকটেরিয়ার দুই শতাধিক প্রজাতির একটি ভিবরিও ভালনিফিকাস বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের প্রফেসর ইমেরিটা রিটা কোলওয়েল। অন্যদিকে গবেষক জুটলা জানান, বেশির ভাগ ভিবরিও সংক্রমণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। অল্প কিছু ভিবরিও ব্যাকটেরিয়া মানুষ বাদে অন্য প্রাণীদের আক্রান্ত করে।
বছরে কত সংক্রমণ
ওহাইর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে আক্রান্ত করে ভিবরিও ব্যাকটেরিয়া। বেশির ভাগ আক্রান্তের ঘটনা ঘটে পাকস্থলি ও অন্ত্রে। এত সংক্রমণের মধ্যে ১০০ থেকে ২০০টি ঘটায় ভিবরিও ভালনিফিকাস।
ভিবরিও প্যারাহিমোলিটিকাস ও ভিবরিও অ্যালজিনোলিটিকাসের মতো অন্য প্রজাতিগুলো পাকস্থলির অসুস্থতা তৈরি করে। ভিবরিও কলোরেই নামের প্রজাতি ডায়রিয়াজনিত রোগ কলেরা সৃষ্টি করে।
সংক্রমণের ঝুঁকিতে কারা
ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা হেলথের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক ড. নরম্যান বিটি জানান, নোনা জলে সময় কাটানোর পর উন্মুক্ত ক্ষতস্থানে দিয়ে ঢুকতে পারে ভিবরিও ব্যাকটেরিয়া। তার ভাষ্য, তার কাছে আসা আক্রান্ত লোকজনের বেশির ভাগ পানিতে বেশি সময় কাটিয়েছেন, তবে পানিতে সামান্য সময় থাকলেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে।
বিটি জানান, সংক্রমণের দৃশ্যমান আলামত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দেহের নির্দিষ্ট অংশ লালচে হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এবং ফোস্কা পড়া। আক্রান্ত স্থানে ব্যথাও থাকবে।
সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে রক্তপ্রবাহ নাগাদ চলে যেতে পারে। এ থেকে প্রাণঘাতী সেপসিস বা পচনও সৃষ্টি হতে পারে। সিডিসির মতে, সেপসিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঠান্ডা ও মারাত্মক কম রক্তচাপ ।
যারা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত, যাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল কিংবা যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তারা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছেন বলে জানান জুটলা।
ভিবরিও ভালনিফিকাস সংক্রমণের চিকিৎসা হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে।
কীভাবে সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব
এ ক্ষেত্রে বিটির পরামর্শ হলো সমুদ্রে নামার আগে উন্মুক্ত ক্ষতস্থান ঢেকে দেওয়া। তার মতে, পানিরোধী ব্যান্ডেজ পরেও পানিতে নামা যেতে পারে।
বিটি জানান, কেউ নিজেকে আক্রান্ত মনে করলে তার উচিত দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া। চিকিৎসা নিতে দেরি করলে হালকা সংক্রমণ থেকে শুরু করে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।