প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বে অঞ্চলভিত্তিক সম্পর্ক পুনঃগঠনের পথে এগোচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে—দেশটি কি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চলেছে?
ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়া ও ইসরায়েল সরাসরি আলোচনা চালাচ্ছে এবং একটি সম্ভাব্য স্বাভাবিককরণ চুক্তির বিষয়ে টাইমলাইনও বিবেচনায় রয়েছে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে এই দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও যুদ্ধে লিপ্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত গোপন চ্যানেলের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সংলাপের পথ তৈরি করেছে। আলোচনাটি সম্ভবত আব্রাহাম চুক্তির অংশ হিসেবে বিবেচিত, যা ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করেন এবং সৌদি আরবে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারআ-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সিরিয়াকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য উৎসাহ দেন বলে জানা গেছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রায় অসম্ভব, বিশেষত গোলান মালভূমির দখলকে ঘিরে দুই দেশের শত্রুতার কারণে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে নেয় এবং বর্তমানে সেখানকার বহু অংশে বসতি সম্প্রসারণ করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব দখল অবৈধ, কিন্তু ইসরায়েল এই অঞ্চল ছাড়তে অনিচ্ছুক।
সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট একাধিকবার বলেছেন, সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী এবং ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সম্মান করবে। তবে একইসঙ্গে সিরিয়া চাইছে ইসরায়েল যেন গত বছরের নতুনভাবে দখল করা অংশ থেকে পিছু হটে।
লেবাননের দৈনিক আল-আখবার জানিয়েছে, আল-শারার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা চাইছেন ইসরায়েল যেন আগ্রাসন বন্ধ করে, তবে তার বিনিময়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিককরণ জরুরি নয়।
ইসরায়েলও কিছু কঠিন শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সেনা মোতায়েন না করা, সিরিয়ায় তুরস্ক বা ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বিশেষত হিজবুল্লাহর উপস্থিতি না থাকা এবং দক্ষিণ সিরিয়ার অস্ত্রহীনকরণ।
ইসরায়েল সম্প্রতি সিরিয়ার দ্রুজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার অজুহাতে দক্ষিণ দামেস্ক অঞ্চলে হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। তবে অনেক দ্রুজ নেতা এই হুমকিকে ভাগ করে শাসন নীতির অংশ হিসেবে দেখছেন।
বর্তমানে গোলান মালভূমিতে প্রায় ৩১ হাজার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে। সেখানে সম্প্রসারণমূলক পরিকল্পনা নিয়ে সিরিয়ার মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, সিরীয়রা দ্বিধাবিভক্ত—একদিকে তারা ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। তারা জানে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি নেই, অন্যদিকে তারা গোলান ছাড়তে চায় না। এ অবস্থায় ১৯৭৪ সালের মতো একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনর্বহালই বাস্তবসম্মত পথ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক জানিয়েছেন, সিরিয়া-ইসরায়েল বিরোধ সমাধানযোগ্য, তবে তা শুরু হতে পারে অনাক্রমণ চুক্তি দিয়ে।
তবে ইসরায়েলের চলমান দখলদারিত্ব এবং শর্তগুলোর কারণে বিষয়টি সিরিয়ার জন্য রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে।
আলোচনা চলছে, তবে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথে এখনও বহু রাজনৈতিক, সামরিক ও জনমত সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
সূত্র: আল-জাজিরা