যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন পর্বে। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে সমঝোতায় না পৌঁছালে বাংলাদেশসহ এক ডজনেরও বেশি দেশের ওপর চড়া শুল্ক কার্যকরের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে বলা হচ্ছে ‘রেসিপ্রোকাল’ বা পারস্পরিক শুল্ক পরিকল্পনার অংশ। এর ঘোষণা প্রথমবার আসে গত এপ্রিল মাসে। তখন ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয় চুক্তি করতে। ৯ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে তার মেয়াদ বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কোন কোন দেশ?
এ সপ্তাহে অন্তত ১৪টি দেশকে সতর্ক করা হয়েছে নতুন শুল্কের বিষয়ে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর।
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে
> মিয়ানমার ও লাওস: ৪০ শতাংশ
> থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া: ৩৬ শতাংশ
> বাংলাদেশ: ৩৫ শতাংশ
> ইন্দোনেশিয়া: ৩২ শতাংশ
> দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, বসনিয়া ও তিউনিশিয়া: ৩০ শতাংশ
এছাড়া জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
এখন পর্যন্ত কটি চুক্তি হয়েছে?
এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ‘৯০ দিনে ৯০ চুক্তি’র প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত কেবল দুটি চুক্তির কথা জানানো হয়েছে—যুক্তরাজ্য এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে গত ৮ মে সই হওয়া চুক্তিতে বেশিরভাগ পণ্যে ১০ শতাংশ এবং স্টিল-অ্যালুমিনিয়ামে শূন্য শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
ভিয়েতনামের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কে চুক্তি হয়েছে। তবে এর পূর্ণ বিবরণ এখনো প্রকাশ হয়নি।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আপাতত একটি ‘সংবেদনশীল বিরতি’তে রয়েছে। তবে চীনের বিনিয়োগে গড়া অনেক দেশকে লক্ষ্য করেই নতুন শুল্ক চাপানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এশীয় দেশগুলোই কেন মূল টার্গেট?
ট্রাম্পের দাবি, এশিয়ার অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু আমদানি করে সামান্য। এই বাণিজ্য ঘাটতির জন্যই তারা শাস্তির যোগ্য। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, যারা টেক্সটাইল, জুতা ও অন্যান্য ভোক্তা পণ্য উৎপাদনে নেতৃত্ব দেয়—তাদের ওপর শুল্ক আরোপে মার্কিন বাজারে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু বাণিজ্য ঘাটতির পরিসংখ্যান দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলা যায় না। অনেকের মতে, চীনকে ঘুরিয়ে আক্রমণ করতেই চীন-নির্ভর উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর ওপর এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এরপর কী হবে?
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে আরও দেশকে শুল্ক আরোপের বিষয়ে জানানো হবে। কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তি ‘কাছাকাছি’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য চুক্তি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। তবে সময়সীমা এগিয়ে আসছে। ফলে দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে শুল্কহার কমাতে মরিয়া হয়ে উঠছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান