২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সীমান্তে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন বাংলাদেশিরা।
ইইউ সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার ৯০০ জন অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নাগরিক।
ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুটে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ঘটেছে, যেখানে ২৯ হাজার ৩০০ জন ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। শুধু লিবিয়ার উপকূল থেকেই ২০ হাজার ৮০০ জন ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।
ইতালির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ইতালিতে ১০ হাজার ৩১১ জন বাংলাদেশি প্রবেশ করেছেন, যা দেশটিতে মোট অভিবাসনের ৩২ শতাংশ। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরিত্রিয়া (৪,৪৬১ জন) এবং তৃতীয় মিসর ৩,৭২৩ জন।
পূর্ব ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে কিছুটা অভিবাসন কমলেও নতুন করে সৃষ্টি হওয়া রুট – যেমন লিবিয়া থেকে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপ – অভিবাসনের সংখ্যা আবার বাড়িয়ে দিচ্ছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটে ২৫ শতাংশ হ্রাস পেলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই নতুন রুটে অভিবাসন বেড়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকান রুটে অভিবাসনের হার ৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১,৩১৭ জনে। জুন মাসে এই রুটে মাত্র ৩০০ অভিবাসী পৌঁছেছেন।
মৃত্যুর মিছিলে আরও ৭৬০ প্রাণ
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৬০ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে, যা এখনো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন পথ হিসেবে চিহ্নিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা এবং বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ জীবন বাজি রেখে পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপের পথে। বহু অভিবাসী মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন।
ইউরোপের সীমান্তে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি যেমন আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আসছে, তেমনি বাড়ছে উদ্বেগও। অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সচেতনতা এবং দেশীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন সময়ের দাবি। তা না হলে এই অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা আরও বড় সংকটে রূপ নিতে পারে।