দ্রুজ সম্প্রদায় কারা, ইসরায়েল তাদের রক্ষা করতে চায় কেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১:৫৯

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুওয়াইদা শহরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে দ্রুজ সম্প্রদায়। সরকারি বাহিনী ও দ্রুজ মিলিশিয়ার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে বহু নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর জের ধরে ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে তারা সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দ্রুজরা হলেন একটি আরব ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তারা মূলত সিরিয়া, লেবানন এবং ইসরায়েল-এ বসবাস করেন। এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয় ১১শ শতকে মিসরে। তারা ইসলামের একটি শাখা অনুসরণ করেন যা খুবই অনন্য—এখানে ধর্মান্তর বা অন্য ধর্মে রূপান্তর এবং ধর্মান্তরের মাধ্যমে বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায় মূলত দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি প্রদেশে বসবাস করেন, যেগুলো ইসরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটস-এর কাছাকাছি। এখানে তারা সুওয়াইদা প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অতীতে আসাদ সরকার ও উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে বারবার আক্রান্ত হয়েছেন।
গোলান হাইটস, যা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে এবং ১৯৮১ সালে তা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করে, সেখানে ২০ হাজারেরও বেশি দ্রুজ বাস করেন। এই অঞ্চলটিতে আরও প্রায় ২৫ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
গোলান হাইটসে বসবাসকারী অধিকাংশ দ্রুজ নিজেকে সিরীয় নাগরিক বলেই পরিচয় দেন এবং ইসরায়েলি নাগরিকত্ব গ্রহণ অস্বীকার করেন। যারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের ইসরায়েলি রেসিডেন্সি কার্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা নাগরিকত্ব পাননি।
গত সপ্তাহে সুওয়াইদায় দ্রুজ যোদ্ধা ও বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রবেশ করলে সংঘর্ষ আরও জটিল হয়ে ওঠে। সরকারপন্থি ইসলামি গোষ্ঠীও সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ে দ্রুজদের মধ্যে এবং তারা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চায়।
এরপর ইসরায়েল সিরিয়ার সরকার বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সুওয়াইদায় দ্রুজদের রক্ষায় এটি করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সিরিয়ার সেনা যদি সুওয়াইদা থেকে সরে না যায়, তবে হামলার মাত্রা আরও বাড়বে।
এরপর ইসরায়েল দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছে হামলা চালায়।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ ঘোষণা দেন সব সম্প্রদায়ের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের। তবে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। মার্চে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের ওপর দমনপীড়নে শত শত নিহত হন, আর এপ্রিলে দ্রুজদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০০ জন নিহত হয়।
দ্রুজরা নিজেরা স্বতন্ত্র মিলিশিয়া ও অস্ত্র রাখার অধিকার সংরক্ষণ করতে চায়, যা শারাআ সরকারের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সূত্র: সিএনএন