সৌন্দর্যের জন্য আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহারের বিধান

ধর্ম ডেস্ক
  ০৬ জুলাই ২০২৫, ২৩:২০
আপডেট  : ০৬ জুলাই ২০২৫, ২৩:২৬

শুধু সাজসজ্জা বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করা, বাড়ির দেয়ালে লেখানো বা ঝোলানো অথবা মোবাইল, কম্পিউটারের ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করা মাকরুহ।

কারণ এটা কোরআনের উদ্দেশ্য ও মর্যাদা পরিপন্থি কাজ। আল্লাহ তাআলা কোরআন নাজিল করেছেন মানুষকে সঠিক ও সত্যের পথ দেখাতে, মানুষ যেন কোরআন পড়ে শিক্ষা গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলাকে চিনতে পারে, সঠিক পথের দিশা পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ مُبٰرَكٌ لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِهٖ وَ لِیَتَذَكَّرَ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ: ২৯)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُهَا

তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ? (সুরা মুহাম্মাদ: ২৪)

তাই আমাদের কর্তব্য কোরআনকে আল্লাহর তাআলার এই নির্দেশনাসমূহের আলোকে গ্রহণ করা এবং উত্তম জীবন গঠনের জন্য গভীর মনোযোগ দিয়ে, চিন্তা-ভাবনা করে কোরআন পাঠ করা। নিছক সাজসজ্জা বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোরআনের আয়াত ব্যবহার না করা।

মুহাম্মদ ইবনে যুবায়ের থেকে বর্ণিত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম) একদিন মাটিতে স্থাপিত একটি ফলকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হুজাইল গোত্রের একটি ছেলেকে তিনি বললেন, এটা কি? ছেলেটি বললো, এটি আল্লাহর কিতাবের একটি অংশ যা ইহুদিরা লিখেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে এমনটি করেছে তার উপর লানত হোক। তোমারা আল্লাহর কিতাবকে তার সঠিক জায়গায় রাখবে। বর্ণনাকারী বলেন, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) তার এক সন্তানকে দেয়ালের উপর কোরআন লিখতে দেখে শাসন করেছিলেন। (তাফসিরে কুরতুবি)

আল্লামা ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) তার ফতোয়ায় লিখেছেন, কোরআনের আয়াত এবং আল্লাহর নামসমূহ দিরহাম, মসজিদের মেহরাব, দেয়াল ও আসবাব পত্রের ওপর লেখা মাকরুহ। (ফাতাওয়া শামী)

তবে বরকত বা শিক্ষা গ্রহণের জন্য হলে এবং যথাযথ আদব রক্ষা করা হবে এই নিশ্চয়তা থাকলে কোরআনের আয়াত মসজিদ বা বাড়ির দেয়ালে লেখা যেতে পারে, আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ঝোলানো যেতে পারে।
কোরআনের আয়াত দেয়ালে ঝোলানো থাকলে সেদিকে পা দিয়ে বসা বা শোয়া যাবে না, অজু ছাড়া ওই আয়াত স্পর্শ করা যাবে না এবং কোনোভাবে যেন ওই আয়াতের অসম্মান না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম এবং আল্লাহর অন্যান্য নিদর্শনাবলিকে যথাসম্ভব সম্মান করা, কোনোভাবে যেন এগুলোর অসম্মান না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,

ذٰلِکَ وَمَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ

এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে এটাতো তার অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। (সুরা হজ: ৩২)