যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিলাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোরপূর্বক মাটিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় দেশটিতে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি ঘটে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমের এক সংবাদ সম্মেলনে, যেখানে তিনি অ্যান্টি-আইসিই (ICE) বিক্ষোভ ও অভিবাসননীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ব্যাখ্যা করছিলেন।
সিনেটর প্যাডিলা সম্মেলনে প্রবেশ করে প্রশ্ন তুলতেই নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে সন্ত্রাসী সন্দেহে মাটিতে ফেলে দেয়, হাতকড়া পরিয়ে আটক করে—যদিও তিনি বারবার নিজেকে একজন নির্বাচিত মার্কিন সিনেটর হিসেবে পরিচয় দেন।
ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে নিন্দার ঝড়।
সিনেটর চাক শুমার, অ্যাডাম শিফসহ শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতারা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে ‘গণতন্ত্রের জন্য ভয়ানক বার্তা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তোলেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিনেটরের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত না হওয়ায় নিরাপত্তাকর্মীরা ‘প্রোটোকল অনুযায়ী’ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে শহরের কেন্দ্রীয় একটি অংশে কারফিউ ঘোষণা করেন মেয়র কারেন ব্যাস। কারফিউ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর ছিলো।
এদিকে আল জাজিরা বলছে, আংশিক কারফিউ জারির এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছিল যখন ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা পাঁচদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে এবং এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক, শিকাগো ও আটলান্টাসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও বহু শহরে।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি অঙ্গরাজ্যবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “ওখান থেকেই অবনতি শুরু হলো। প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন যেন তারা কোনও শত্রু দেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।”
নিউজমের ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট যাদের টার্গেট করছেন তারা সন্ত্রাসী নয়, তারা তো আমাদের সমাজের সাধারণ সদস্য—রান্নাঘরের কর্মী, মালী, দিনমজুর, দর্জি। এটা শক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটা দুর্বলতা। ট্রাম্পের সরকার আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে না, বরং ভয়ভীতি ছড়িয়ে আমাদের আঘাত করছে। এবং মনে হচ্ছে, এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আমাদের কাউকে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই, শুধু সন্দেহ বা গায়ের রঙের ভিত্তিতে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তাহলে আমরা কেউই নিরাপদ নই। স্বৈরশাসকরা শুরুতে এমন মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায়, যারা আত্মরক্ষা করতে অক্ষম। কিন্তু তারা সেখানেই থেমে থাকে না।”
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের অবস্থানে অটল থাকার বার্তা দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ সেনাঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের বীর সেনারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্য নয় যে, এখন নিজ দেশের ভেতরেই তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশে দেশ ধ্বংস হচ্ছে — যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে।
তিনি বলেন, “আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তা হতে দেব না। এটা কখনোই ঘটতে দেব না।”