বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে ইহুদি ও ইসরায়েলি শিক্ষার্থীদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য সব ধরনের ফেডারেল তহবিল বাতিলের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অভিযোগ আনেন হোয়াইট হাউজের জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স টু কমব্যাট অ্যান্টিসেমিটিজম-এর কর্মকর্তারা।
চিঠিতে বলা হয়, ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট অনুযায়ী জাতি, বর্ণ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের ফেডারেল তহবিল পাওয়ার অধিকার নেই। অথচ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ‘ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীন’ ও কখনো ‘ইচ্ছাকৃত অংশগ্রহণকারী’ হিসেবে ইহুদি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীদের হয়রানিতে জড়িয়েছে।
চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ না নিলে হার্ভার্ডের সব ধরনের ফেডারেল অর্থায়ন বাতিল করা হবে ও সরকারের সঙ্গে এর সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার মুখে পড়বে।
এই চিঠি এমন এক সময় এলো, যখন হার্ভার্ডের সঙ্গে ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত এপ্রিলেই ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ২৩০০ কোটি ডলারের সরকারি তহবিলের মধ্যে ২৩০ কোটি ডলার স্থগিত করে দেয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ৩৬ শতাংশ।
এই অর্থসংকটের জবাবে হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করে এবং জানায়, “বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বা সাংবিধানিক অধিকার ছেড়ে দেবে না। প্রেসিডেন্ট গারবারও বলেন, আমরা হার্ভার্ডের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে তুলে দেব না। আমরা জ্ঞানচর্চা ও স্বাধীন চিন্তার পক্ষে দাঁড়িয়েছি।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবিগুলো ছিল, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ‘আচরণ ভঙ্গের’ রিপোর্ট করা, পরিচালনা ও নেতৃত্ব কাঠামোতে সংস্কার বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই) কর্মসূচি বাতিল, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন। এই দাবিগুলোর বিপরীতে হার্ভার্ড প্রশাসন মার্চে মামলা করে, যা এপ্রিল মাসে আরও সম্প্রসারিত হয়।
মূল বিতর্কের শুরু যেখানে
হার্ভার্ডে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ থেকেই মূলত এ বিতর্কের সূচনা। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্রের দাবি। এই পরিস্থিতিতে হার্ভার্ডসহ বোস্টনের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থী ক্যাম্প গড়ে ওঠে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ- এই ক্যাম্প ইহুদি ও ইসরায়েলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। যদিও বাস্তবে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভে অংশ নেন ও শাব্বাত ধর্মীয় অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন।
এর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ‘এন্টি-সেমিটিজম বা ইহুদিবিদ্বেষ’ মোকাবিলার জন্য একটি বিতর্কিত সংজ্ঞা গ্রহণ করে, যেখানে জায়নবাদকে সুরক্ষিত শ্রেণি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষককে বরখাস্ত ও প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটিকে স্থগিত করা হয়।
আইনি সহায়তা সংস্থা প্যালেস্টাইন লিগ্যাল বলছে, হার্ভার্ডের এসব পদক্ষেপ ‘প্রো-প্যালেস্টাইন মতপ্রকাশের চরম দমন-পীড়ন’, যা ফেডারেল নাগরিক অধিকার আইনের ন্যায্যতা স্থাপন নয় বরং ফিলিস্তিনি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
সূত্র: দ্য মিডল ইস্ট আই