নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা করছে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে ।এই পদক্ষেপ আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লক্ষ অ্যামেরিকান নাগরিকের ওপর প্রভাব ফেলবে যারা বিদেশে জন্মগ্রহণ করার পর দেশে বৈধ অভিবাসী হিসেবে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে জড়িত এবং ভুল তথ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে অবৈধভাবে নাগরিকত্ব লাভ করা অ্যামেরিকানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে।
জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সিভিল ডিভিশন ১১ জুন জারি করা এক মেমোতে, যুদ্ধাপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধভাবে নাগরিকত্ব অর্জন, নাগরিকত্বের আবেদনে তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলকরণকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রসিকিউটরদের নির্দেশ দিয়েছে।
মেমোতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনও ব্যক্তি 'অবৈধভাবে' নাগরিকত্ব লাভ করেন অথবা বস্তুগত তথ্য গোপন করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করেন তাহলে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট অভিযুক্ত ব্যক্তির অ্যামেরিকার নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। এছাড়া নাগরিকত্বপ্রাপ্ত অপরাধী, গ্যাং সদস্য, অথবা, অ্যামেরিকার জন্য চলমান হুমকিস্বরূপ অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত যেকোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে।মূলত দোষী সাব্যস্ত সন্ত্রাসীদের অ্যামেরিকার মাটিতে ফিরে আসা এবং অ্যামেরিকান পাসপোর্টে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।
ট্রাম্প প্রশাসন সেসব ব্যক্তিদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেবে যারা গুরুতর অপরাধ, মানব পাচার, যৌন অপরাধ, সহিংস অপরাধ, ব্যক্তিগত তহবিল, কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন খাতে জালিয়াতি করেছে। এছাড়া তালিকায় রয়েছে, সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকা, গুপ্তচরবৃত্তি, দেশ থেকে অবৈধভাবে পণ্য রপ্তানি ও যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তি, নির্যাতনকারী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি।
যারা অপরাধী চক্রের অংশ অথবা অপরাধমূলক সংগঠনের সাথে যুক্ত, তারাও তাদের নাগরিকত্ব হারাবেন। পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ জালিয়াতি এবং মেডিকেড/মেডিকেয়ার জালিয়াতি সহ বিভিন্ন ধরণের আর্থিক জালিয়াতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরও রেহাই দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে যে, যাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা চলছে, তারা ফৌজদারি মামলার মতো আইনজীবী পাওয়ার অধিকার হারাবেন।
২০২৩ সালের তথ্য উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লক্ষ অ্যামেরিকান নাগরিকের ওপর প্রভাব ফেলবে যারা বিদেশে জন্মগ্রহণ করার পর দেশেবৈধ অভিবাসী হিসেবে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অ্যাক্সিওসের মতে , ডিওজে ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০৫ জনকে নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যা প্রতি বছর প্রায় ১১ জন।
ইউএস সিটিজেন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) অনুযায়ী যাদের অ্যামেরিকার নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে তারাই ন্যাচারালাইসড নাগরিক। অন্যদিকে ন্যাচারালাইজেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কংগ্রেস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের (আইএনএ) সকল শর্তাবলী পূরণের মাধ্যমে একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাকে অ্যামেরিকার নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
নাগরিকত্ব পাওার জন্য একজন নাগরিকের যেসকল যোগ্যতা থাকা আবশ্যক সে মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া। তবে নাগরিকদের স্বামী বা স্ত্রী এবং দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য এটি ব্যতিক্রম। আরেকটি দিক হল, ব্যক্তিকে অবশ্যই ইংরেজি বুঝতে, বলতে এবং লিখতে হবে এবং অ্যামেরিকার প্রশাসন এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
নাগরিকত্ব বাতিলকরণ প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রকাশির মেমোতে নাগরিকত্ব বাতিলকরণের জন্য ১০টি ডিপার্টমেন্টকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ডিপার্টমেন্টগুলো নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে মামলাগুলোকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করবে তা দেখভাল করবে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নাগরিকত্ব বাতিলের নীতিগুলো নিয়ে কাজ করার বিষয়কে প্রাধান্য দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও এই বিষয়টিকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই মেমোটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা এবং নাগরিকদের বিতাড়ন এবং আটক করার জন্য অভিবাসন নীতির আওতায় কঠোর ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
এর আগে, ইউএস সুপ্রিম কোর্ট জন্মগত নাগরিকত্ব সম্পর্কিত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে আংশিক রায় দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ফেডারেল ডিসট্রিক্ট আদালতের বিচারকরা কোনও সরকারি নীতি আটকাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবেন না।