৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন করলেন ইউপি চেয়ারম্যান-উদ্যোক্তা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা মিলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন করে দেওয়ার কাজ করছে। সেই চক্রের মাধ্যমে ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা জন্মনিবন্ধন করে আসছিলেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানতে পারলে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এ অবৈধ কাজে সহায়তাকারী পরিষদের উদ্যোক্তা নিজের দোষ স্বীকার করে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন।
জেলার স্থানীয় সরকার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চরকাটারী ইউনিয়নে ৭৯৫ জনের অবৈধ জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়। গত ১০ মাসের মধ্যে হওয়া ওই জন্মনিবন্ধনগুলো বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়। পরে জন্ম নিবন্ধনগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উদ্যোক্তা জলিলকে কয়েকদিন ধরেই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। চেয়ারম্যান নিজে বাঁচার জন্য উদ্যোক্তার একার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যাচাই-বাছাই না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে। ইউনিয়নের সব জন্মনিবন্ধন বন্ধ করলে নানা সমস্যা ও ভোগান্তি হতে পারে।
ইউনিয়নের বোর্ডঘর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলিল, ওয়াজ উদ্দিন, রহিম মিয়া বলেন, ৭৯৫ জনের যে জন্মনিবন্ধন হয়েছে, তারা কেউ আমাদের এলাকার বাসিন্দা না। চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা টাকার বিনিময়ে অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন।
ইউপি সদস্য মো. জয়েদ আলি মোল্লা বলেন, ৭৯৫ জনের অবৈধ এ জন্মনিবন্ধন হওয়ায় আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হবে। এর দায় চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তার। চরকাটারী ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কোনো সচিব ছিল না। উপজেলার পার্শ্ববর্তী বাচামারা ইউনিয়নের সচিব আলমগীর হোসেন এই ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ২০ অক্টোবর নতুন সচিব মো. সেলিম দায়িত্ব গ্রহণের পরই অবৈধ জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং তিনি ইউএনওকে অবগত করেন।
চরকাটারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কম্পিউটারের কাজ তেমন বুঝি না। আমি টাচ মোবাইলটাও ভালো করে চালাতে পারি না। পরিষদের উদ্যোক্তা মো. জলিল মন্ডলের কাছে আমার জন্মনিবন্ধনের আইডির পাসওয়ার্ড থাকতো। সেই সুযোগেই উদ্যোক্তা জলিল এরকম অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও খুব বিপদে পড়েছি।
তবে চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে উদ্যোক্তা মো. জলিল মন্ডলকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, শুনেছি সে অসুস্থ, ছুটিতে আছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহসানুল আলম জাগো নিউজকে জানান, এরইমধ্যে চেয়ারম্যান ও সচিবের নিবন্ধন আইডি বন্ধ করে দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। যেসব জন্ম নিবন্ধন অবৈধ, সেগুলো বাতিল করা হবে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।