ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ

বাংলাদেশিদের সবচেয়ে অপছন্দের দেশ মিয়ানমার, তারপর ভারত,কারণ?

পাকিস্তানকে পছন্দ করে ৫৯ শতাংশ মানুষ!
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে অপছন্দের দেশ মিয়ানমার। ৫৯.১ শতাংশ মানুষ মিয়ানমারকে অপছন্দ করে। তবে পছন্দ করে ২৪.৫ শতাংশ মানুষ। অপছন্দের তালিকায় এরপর আছে ভারতের নাম। দেশটিকে বাংলাদেশের ৪১.৩ শতাংশ মানুষ অপছন্দ করে। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এক জনমত জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। ১৩ থেকে ২৭ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী এই জরিপ করে।
জরিপে ১ হাজার উত্তরদাতাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশকে ১ থেকে ৫ স্কেলে ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়। স্কেলের ১ এবং ২ মিলে হয় পছন্দ আর ৪ এবং ৫ মিলে অপছন্দ।
জরিপে দেখা যায়, ভারতকে পছন্দ করে বাংলাদেশের ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ। পাকিস্তানকে পছন্দ স্কেলে বাছাই করেছে ৫৯ শতাংশ মানুষ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
জরিপটির ফলাফল থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে এবং দেশের মানুষ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করেন।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই চরম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটোর মধ্যে অপছন্দ স্কেলে বেশ বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের ২৮.৫ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। অন্যদিকে ভারতের অপছন্দ স্কোর ছিল ৪১.৩ শতাংশ।
অন্যান্য বাছাই করা দেশের মধ্যে, ‘পছন্দ’ স্কেলে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ভোট পায় (৬৮.৪ শতাংশ), যদিও চীন (৬৬ শতাংশ), রাশিয়া (৬৪ শতাংশ) এবং যুক্তরাজ্য (৬২.৭ শতাংশ) বেশি দূরে ছিল না।

যে কারণে ভারতকে অপছন্দ করেন বাংলাদেশিরা
জরিপটি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ অ্যান্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের ১ হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেখানে সমান সংখ্যার নারী এবং পুরুষ ছিল, যাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিল মুসলিম। উত্তর দাতাদের অর্ধেকের একটু বেশি ছিল ৩৪ বছর বয়সের নিচে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত
সার্বিকভাবে ভারত এবং পাকিস্তান পছন্দ স্কেলে প্রায় সমান হলেও, অপছন্দের স্কেলে ভারতের পাল্লা বেশি ভারি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে দায়ী করেন।
গত ৫ অগাস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মসূচীতে প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমেও আগের তুলনায় বেশি ভারত-বিরোধী বক্তব্য স্থান পাচ্ছে।
ড. ইউনূস ভারত সম্পর্কে বাংলদেশের বৈরী মনোভাবের কারণ নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এখন ‘নিম্ন পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।
তিনি অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত শুধু একটি দল, আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করেছে।

ধর্ম এবং বয়সের পার্থক্য
ভারত এবং পাকিস্তান সম্পর্কে জরিপে প্রকাশিত মতামতে ধর্মের ভিত্তিতে পার্থক্য দেখা যায়। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৪.২ শতাংশ ভারতকে অপছন্দ করে মত দেন। অন্যদিকে অমুসলিম (হিন্দু, ক্রিস্টান ও বৌদ্ধ) উত্তরদাতাদের মাত্র ৪.২ শতাংশ ভারতকে অপছন্দ করেন।
তবে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে দু’দেশের প্রতিই ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। ভারতকে পছন্দ স্কেলে মত দেন মুসলিম উত্তরদাতাদের ৫০.৭ শতাংশ আর অমুসলিম উত্তরদাতাদের ৯০.১ শতাংশ । পাকিস্তানের পক্ষে পছন্দ স্কেলে ভোট দেন মুসলিম উত্তরদাতাদের ৬০.১ শতাংশ আর অমুসলিম উত্তরদাতাদের ৪৪.১ শতাংশ।
বয়সভেদেও কিছু তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। তরুণদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি পছন্দ ভারতের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে পছন্দের স্কেলে পাকিস্তান থেকে ভারত কিছুটা এগিয়ে আছে।
উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা ১৮-৩৪ বছরের বয়সী, তাদের ৪৭.৮ শতাংশ ভারতকে ‘পছন্দ’ এবং ৪৯.৩ শতাংশ ‘অপছন্দ’ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, ৬২.১ শতাংশ ‘পছন্দ’ এবং ২৬.৮ শতাংশ ‘অপছন্দ’ করেছেন।
তবে ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে যেসব উত্তরদাতা ছিলেন, তাদের মধ্যে ভারতকে ৫৯.৮ শতাংশ ‘পছন্দ’ আর ৩৫ শতাংশ ‘অপছন্দ’ করেছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ করেছেন ৫৫.৭ শতাংশ এবং ৩০.৫ শতাংশ ‘অপছন্দ’ করেছেন।