প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী বছর (২০২৫) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে। এর ভেন্যু ও অন্যান্য বিষয়াবলি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ঠিক করে ফেলবো। আশা করছি এই সম্মেলন হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে। বিশ্বের সবগুলো দেশ এতে অংশ নেবে। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা খুবই আগ্রহী তারা সবাই থাকবে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রাখাইনের সঙ্গে বাংলাদেশ শেয়ার করছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না বা দেশের প্রস্তুতি রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, পুরো পরিস্থিতি আমরা খুবই গভীরভাবে মনিটর করছি। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা একজন উচ্চ পদস্থ একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে এটা মনিটর করবেন। যারা যারা অংশীজন আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
জাতিসংঘের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণে সময়ে তিনি এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার সরকারের কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আছে। কোম্পানিগুলো যেন ফাউল প্লে করতে না পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজার নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে। দ্রুত প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন হলে সেটি আরও জোরদার হবে।
সরকার কি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এটা সরলীকরণ হয়ে গেল। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা আছে। পুরো বিশ্ববাজার আমরা মনিটর করছি। সয়াবিন ও পাম অয়েলের ক্ষেত্রে অক্টোবর নভেম্বর থেকে মার্কেট উর্ধ্বমুখী। ৯২০-৯৪০ ডলারের টনের তেল এখন ১২০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। সয়াবিনের মার্কেট প্লেয়ার কিন্তু কম। ৩/৪টি কোম্পানি মূলত মার্কেটটা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা অনেক বড় পরিসরে আমদানি করে। পুরো বিষয়টি আমাদের মনিটরিংয়ে আছে।
শফিকুল আলম বলেন, মার্কেট উর্ধ্বমুখী হলে আমরা অ্যাডজাস্ট করি। কোনো দেশে অ্যাডজাস্টমেন্ট হয় না। আমরা ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এটা করছি। আমরা মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বাজার মনিটর করছি। কোম্পানিগুলো কোনো ফাউল প্লে করছে কি না এজন্য বিদেশে কম্পিটিশন কমিশন দেখে। আমরা খুব দ্রুত প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করবো। তারা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। প্রতিটি মৌসুমি পণ্যের মূল্য কমেছে বলে দাবি করেন প্রেস সচিব।
ছাত্রলীগ যুবলীগের অনেকে কলকাতায় বসে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা অনেক লুটপাট-চুরিচামারী করে সেখানে গেছে। তারা অনেক ধরনের কথাবার্তা সেখানে বসে বলছেন। তবে এটা কে কীভাবে নিচ্ছেন এটা হলো বড় কথা। আমাদের কথা হলো তারা গত ১৫ বছরের অপশাসনের প্রতীক ছিল। তাদের কারা মাইলেজ দিচ্ছে এটা তাদের ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা কমেন্ট করতে চাই না।
বিগত সরকারের সুবিধাভোগী সরকারি আমলা ও কূটনৈতিকদের বিষয়ে সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রশাসনের রদবদল চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক হাজার রদবদল হয়েছে। এটা চলমান রয়েছে। সরকার যেখানে প্রয়োজন মনে করছে সেখানে কাউকে পদোন্নতি, বদলি বা নতুন করে কাউকে পদায়ন করছে। এটা চলমান আছে। নানান কারণে হতে পারে, কারও বিরুদ্ধে যদি আগের সরকারে দোসর বা সুবিধাভোগী হওয়ার গুরুতর অভিযোগ থাকলে তা বিবেচনা করা হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মিশনে পরিবর্তনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে। সেসব সুপারিশ সরকারের পক্ষ থেকে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে। ডিসেম্বর মাসে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত পিএলআরে চলে যাবেন। আরও ২০ টির মতো দেশে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হচ্ছে। সে নিয়োগগুলো এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।