সাদপন্থিদের ঠেকাতে লাঠি হাতে জুবায়েরপন্থিরা, হামলায় আহত 

তাবলিগ জামাত
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩৬

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা ঠেকাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় এ বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় মাওলানা সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। এতে আহত হন সাদ অনুসারী দুই মুসল্লি।
বিশ্ব ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই ইজতেমার বিবদমান দুই পক্ষের মুসল্লিদের সংঘাতের ঘটনায় ইজতেমার সফলতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
পুলিশ ও তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। তাদের দেখাদেখি ইজতেমা মাঠে ২০ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমার ঘোষণা দেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। কিন্তু তাদের ইজতেমা করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন জুবায়ের অনুসারীরা। সরকার থেকেও অনুমতি নেই। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন খবর ছড়িয়ে পড়ে। মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জড়ো হওয়া ঠেকাতে দুপুর ১টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জুবায়ের অনুসারীরা। এসময় মাওলানা সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তারা হামলা ও ভাঙচুর চালান। এসময় সাদ অনুসারীদের দুই মুসল্লি আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে জোড় পালনের বিষয়ে সকালে আমাদের চারজন প্রতিনিধি গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সঙ্গে দেখা করেন। জেলা প্রশাসক গাজীপুর মহানগর পুলিশের দক্ষিণের উপ-কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরমধ্যেই আমরা উপ-পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগে থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন জুবায়ের অনুসারীরা। এসময় মন্নুগেট এলাকায় আমাদের গাড়িটি পৌঁছাতেই লাঠিসোঁটা নিয়ে জুবায়ের অনুসারীরা হামলা চালান। এসময় আমাদের দুই সাথি মো. বশির ও আতাউর আহত হন। পাশাপাশি আমাদের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘সাদ অনুসারীরা কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বুধবার রাতেও তারা ঘোষণা দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর তারা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন। এটা শুনে আমাদের অনেক সমর্থক, মাদরাসার ছাত্ররা তাদের ঠেকাতে রাস্তায় নামেন। এসময় সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি ইজতেমা মাঠের দিকে যেতে চায়। পুলিশ তাদের ঘুরিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও তারা গাড়ি নিয়ে আমাদের সাধারণ ছাত্রদের ওপর দিয়ে চলে যেতে চায়। এসময় আত্মরক্ষার্থে ছাত্ররা তাদের বাধা দেন।’
এদিকে সড়ক অবরোধের কারণে কয়েকঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
উপকমিশনার (টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে জোড় পালনের বিষয়ে সাদ অনুসারীদের এখনো সরকারিভাবে অনুমতি নেই। তাদের একটি দল এ বিষয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমি তাদের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলি। এরমধ্যেই সাদ অনুসারীরা মাঠে প্রবেশ করছেন—এমন খবরে জুবায়ের অনুসারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাদের (সাদ অনুসারী) গাড়িটি বেরিয়ে যাওয়ার সময় অবরোধের মুখে পড়ে। এসময় একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালান অবরোধকারীরা।’
তিনি বলেন, অবরোধে বেশ কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আমরা গিয়ে বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিই।
তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী, অন্য ভাগে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। তাদের মধ্যে বিবদমান বিরোধে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা করবেন। চার দিন বিরতি দিয়ে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা করবেন সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করে আসছিলেন স্থানীয়রা।