বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি-স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরে বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন দলের ব্যানারে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ। বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সেচ্ছাসেবী দল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজকের এইদিনে জাতির সূর্যসন্ত্রানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। এ দিবসগুলো আমাদের মূল পরিচয়ের স্মারক। আমরা এ সূর্যসন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থান এ বছর আলাদা তাৎপর্য বহন করছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এ জাতি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়। তারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, সেটি পালন করাই আমাদের কাজ।’
সকালে সোয়া ১০টার দিকে রায়েরবাজার বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফ সোহেল বলেন, ‘৭১ এবং ২৪ নিয়ে একটি মহল জল ঘোলা করা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা বার বার দেখানোর চেষ্টা করছে, আমরা তরুণ প্রজন্ম যারা রক্ত দিয়ে নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছি, তারা ৭১-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা ২৪-কে মনে করি ৭১-এর ধারাবাহিকতা। আমরা ৭১-এর লড়াইকে একটি চলমানতার সঙ্গে দেখতে চাই।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় দেখানোর চেষ্টা করেছে ৭১ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এবং তারা ক্ষমতায় এসে দেখানোর চেষ্টা করেছে এটাই হলো বাঙালি চূড়ান্ত পরিণতি। তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে কৌশল অবলম্বন করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে তাদের দলীয় ব্যানারে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা বার বার বলার চেষ্টা করছি, ৭১ ছিল পুরো জনগোষ্ঠীর লড়াই। এ দেশের ছাত্র-জনতা, কৃষি, দিনমজুর সবার লড়াই। এটা শুধু আওয়ামী লীগের লড়াই নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা– স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য, মানবিকতা, সামাজিক ও সুবিচার। যেটা আওয়ামী লীগ সংবিধানের মূলনীতিতেও রাখেনি। তারা চার মূলনীতি আমদানি করেছিল তাদের মতো করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধকে কুক্ষিগত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমাদের সার্বভৌমত্বকে রক্ষায় যে লড়াই করার কথা সেটা আওয়ামী লীগ করেনি। তারা নিজেদের স্বার্থে বিদেশি শক্তির মদদে আমাদে সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। তাই আমাদের ২৪-এর লড়াই লড়তে হয়েছে। রায়েরবাজারে বদ্ধভূমির জায়গর ২৪-এর শহীদদের গণকবর দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করে তারা। সেই থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।