নাসার প্রধান নভোচারী

পৃথিবী সুন্দর ভুল থেকেও শেখা যায়, মহাশূন্যে ভুল মানে মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪১
নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা

মহাকাশ বা মহাশূন্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। পৃথিবী থেকে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। অথচ মহাকাশ মিশনে অসংখ্যবার অংশ নেওয়া নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবার ভাষ্য, ‘মহাশূন্য নয়, পৃথিবীটাই সবচেয়ে সুন্দর। মহাশূন্যের চেয়ে বহুগুণ সুন্দর এ পৃথিবী।’
মহাশূন্যের চেয়ে পৃথিবী কেন বেশি সুন্দর—সেই ব্যাখ্যাও চমৎকারভাবে দিলেন দুইবার মহাকাশে হাঁটা এ নভোচারী। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ভুল করলে শোধরানো যায়। ভুল থেকেই এখানে শেখার অবারিত সুযোগ। সফল হওয়ার সুযোগের শেষ নেই। কিন্তু মহাশূন্যে খুব ছোট্ট ভুলেই মৃত্যু অনিবার্য। সেখানে ভুল মানেই মৃত্যু। কথাটা খুব ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু অনেক বড় বিষয়। জীবন-মৃত্যুর খেলা।’
সুন্দর পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নাসার প্রধান নভোচারী বলেন, ‘আমার মনে হয় না এখন পর্যন্ত আর কোনো গ্রহ মানুষের বসবাস উপযোগী। তাই পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত।’
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাকাশ অভিযাত্রার গল্প শোনান নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। কথা ও গল্পে শিক্ষার্থীদের সামনে মহাশূন্যের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথাগুলো শুনছিলেন শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত সবাই।
‘ফ্রম আর্থ টু অরবিট: অ্যান অ্যাস্ট্রোনাটস টেল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অসীম শূন্যতায় তার কাটানো সময়ের গল্প ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন নাসার এ নভোচারী। জোসেফ এম আকাবা একজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী। মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। একজন শিক্ষকও। তিনি অসংখ্যবার মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ৩০৬ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন। এছাড়া তিনি দুইবার মহাকাশে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
মহাকাশচারী জোসেফ এম আকাবা তার বক্তব্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেকে আমাকে বলেছেন যে, আমি তাদের অনুপ্রেরণা। কিন্তু আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আমি নিজেই অনুপ্রাণিত বোধ করছি। আপনাদের জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা আমাকে অবিভূত করেছে।’
শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, একমাত্র লেখাপড়ার মাধ্যমেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব। যারা মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের উচিত নাসার ওয়েবসাইটটা ফলো করা। কারণ সেখানে অসংখ্য সুযোগ ও পরামর্শ দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীদের ভুলকে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়ে জোসেফ বলেন, ‘ভুলকে ভয় পেলে চলবে না। ভুল মানুষকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।’
নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আকাবা বলেন, ‘নাসার লক্ষ্য হলো- অজানা সীমানার বাইরে অনুসন্ধান চালানো। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা অনেক দূর যেতে পারবো। এজন্য বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মহাকাশ নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কৌতুহল এবং উচ্ছ্বাস দেখে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অচিরেই এ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কেউ নাসার আর্টেমিস স্কোয়াডে অংশ নেবেন।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ডাটা অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক মাহবুবুল আলম মজুমদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি সেকশনের পাবলিক এনগেজমেন্টের ডিরেক্টর স্কট ই হার্টম্যান। সঞ্চালনা করেন অফিস অব কমিউনিকেশন্সের ডিরেক্টর খায়রুল বাশার।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। তিনি শিক্ষার্থীদের মহাকাশ গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশচারীদের তালিকায় একদিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নামও থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন অধ্যাপক আরশাদ এম চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সাদিয়া হামিদ কাজীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।