অসংখ্যবার মহাকাশে গেছেন। কাটিয়েছেন ৩০৬ দিন। ঘুরেছেন, দৌড়েছেন, ব্যায়াম করেছেন। রীতিমতো সংসার পেতেছেন মহাশূন্যে। কখনও কি এলিয়েন দেখেননি? বাংলাদেশি এক তরুণের এমন প্রশ্নে নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। পরক্ষণে বলে উঠলেন, ‘না, আমি এলিয়েন দেখিনি। তবে ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান দেখেছি।’
হলভর্তি মানুষের অট্টহাসি। সঙ্গে হাসলেন জোসেফ এম আকাবাও। সেই হাসির শব্দ থামতেই আকাবা বলেন, ‘এগুলো (ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান) সবই মজার। সেখানে আমরা কঠিন সময়ে এগুলো দেখে সময় কাটিয়েছে, ফুরফুরে মেজাজে থেকেছি।’
অর্থাৎ মহাকাশে বসে আকাবা ও মিশনের সঙ্গীরা যে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘দ্য ব্যাটমান’ এবং ‘স্পাইডারম্যান’-এর কথা বুঝিয়েছেন, তা বুঝতে আর কারও বাকি নেই। এভাবেই গল্পে-আড্ডায় মহাকাশ ভ্রমণের নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতা শোনান জোসেফ এম আকাবা।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে ‘মিট অ্যান্ড গ্রেট’ অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন জোসেফ আকাবা। বেসিস স্টুডেন্ট ফোরাম ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিকেল ৩টায় আইসিটি টাওয়ারের অডিটোরিয়ামের প্রবেশের মুখেই ৩৬ জুলাইয়ের বীর-শহীদ এপিটাফ ঘুরে মঞ্চে ওঠেন নাসার এ প্রধান নভোচারী। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তন। সবাইকে অভিবাদন জানানোর পর মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিশে গেলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুরে। সেই সুরে মুগ্ধ হয়ে মহাকাশ শিক্ষায় বাংলাদেশকে মার্কিন মহাকাশ সংস্থার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিলেন আকাবা।
উপস্থিত এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায় জেমস গার্ডনার দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে মহাকাশ শিক্ষার প্রসারে কাজ করছেন। আমি একজন শিক্ষক। অবশ্যই আমি মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায় আমার অভিজ্ঞতা এবং সরকারের আগ্রহে অংশীজনদের নিয়ে বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও নভোচারী হওয়ার স্বপ্নপূরণের বাস্তব শিক্ষার কাজ করতে চাই।
জোসেফ আকাবা বলেন, মহাশূন্য অভিযান যেমন দুঃসাধ্য নয় তেমনি খুব সহজও নয়, এটা বাস্তব। এ দুঃসাহসিক কাজে জয়ী হতে হলে আপনাকে পাগল (ক্রেজি) হতে হবে। ক্রেজিনেস থাকলেই বিজয় আসবে। সফলতা ধরা দেবে।
নিজের উপস্থাপনা পর্বের শুরুতে উপস্থিতিদের মধ্যে কারা পিৎজা খেতে পছন্দ করেন জানতে চান জোসেফ এম আকাবা। এরপর মহাকাশে তাদের পিৎজা আড্ডার ভিডিও উপস্থাপন করেন তিনি।
দেখানো ভিডিওর বিভিন্ন বর্ণনা তুলে ধরে আকাবা বলেন, ছয়মাস আগে আমরা কাজাখস্তান থেকে আইএসএসের পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেখানে কাটিয়েছি ৩০৬ দিন। সেখানে বৈরী পরিবেশে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমরা নিয়মিত ব্যয়াম করেছি। দৌড়েছি, ভারোত্তলন করেছি। সেখানে যেকোনো ভারী জিনিস সহজে পুশ করে বহন করা যায়। আমরা সেখানে একটি গাছও রোপণ করে এসেছি।
মহাকাশে থাকার সময়ে পরিবারকে মিস করতেন কি না, কেমন সেই অনুভূতি-এমন প্রশ্নে আকাবা বলেন, ‘আমরা সেখান থেকে প্রতিদিন ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হতাম। কথা বলতাম, সময় কাটাতাম।’
বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক শাখার দায়িত্বরত প্রধান কর্মকর্তা জেমস স্মিথ গার্ডনার, আইসিটি পলিসি অ্যাডভাজার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ও আইসিটি বিভাগের যুগ্মসচিব ইশরাত হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন ‘নাসা স্পেস অ্যাপ ২০২৪’ জয়ী ময়মনসিংহ থেকে অংশ নেওয়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিম ইকোরেনজার্স দলনেতা ফুয়াদ হাসান।
বাংলাদেশের মহাকাশপ্রেমীদের সম্বোধন করে মার্কিন কর্মকর্তা জেমস গার্ডনার বলেন, সবারই নিল স্যুটের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। আজ তাকে প্রশ্ন করেই জেনে নাও মহাকাশ ভ্রমণের রহস্য। সে কিন্তু শিক্ষকও। তাই তার কাছ থেকে শিখতে পরাটাও হবে মনোমুগ্ধকর।
আইসিটি বিভাগের যুগ্মসচিব ইশরাত হাসান বলেন, মিলিটারি রেজিমের বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। ইতিহাস ভোলা যায় না। জুলাইয়ে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এবার আমাদের আরও বেশি অবজেক্টিভ হতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে ‘জুলাই ৩৬’-এ শিক্ষার্থীদের বহন করা বাংলাদেশের পতাকা নাসার প্রধান নভোটারী জেমস এম আকাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।