আওয়ামী লীগের বিষয়ে ‘আদালত’ ও ‘রাজনৈতিক ফয়সালার’ অপেক্ষায় থাকবেন সিইসি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৯

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আদালত’ ও ‘রাজনৈতিক ফয়সালা’ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “(আগামী নির্বাচনে) আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না, বা আসতে দেওয়া হবে কি হবে না, এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
“কারণ অনেকে আবার শুনতেছি মামলাও করছে তাদের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে, নির্বাচনে যেন আসতে না পারে; পত্রিকায় দেখেছি আরকি।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন; দলের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, অন্যরা আত্মগোপনের রয়েছেন।
দেশের নানা জায়গায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলায় হত্যা ও গণহত্যাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সিইসির সঙ্গে আলাপকালে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ তোলেন সাংবাদিকরা।
গত ২১ নভেম্বর সিইসির দায়িত্বে আসা নাসির উদ্দীন বলেন, “কোর্ট থেকে রায় এলে তো আমাদের সে অনুযায়ীই করতে হবে। আর রাজনৈতিক ফয়সালা কী দাঁড়ায় দেখি। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আমরাও অপেক্ষা করি। সময় এলে দেখতে পারবেন তো।”
নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনায় বসবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন।
“এখানে রাজনৈতিক দলগুলোই হল মূল অংশীজন। এদের সঙ্গে তো আলোচনা ধারাবাহিক চালিয়ে যেতে হবে।”
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন হবে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আপনি একটা ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু আইনের দোহায় দিয়ে করলেন না, সেটা তো হয় না।”
নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার আনতে গত ৩ অক্টোবর বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে কমিশন গঠন করা হয়। ওই সংস্কার কমিশনের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে প্রতিবেদন আসার আগেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন।
সিইসি বলেন, “নানা সমস্যা আছে, অনেক টেকনিক্যাল বিষয় আছে। তাই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা আমরা এখনও করছি না।”
ভোট তাহলে ব্যালটেই হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের চিন্তা তাই।”
সবশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর এ কমিশনের বিদায় হয়। এরপর ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন যাত্রা শুরু করে।
জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত: সিইসি
এর আগে ২০১০ সালে ইভিএম চালুর পর স্থানীয় নির্বাচনেই তা ব্যবহার হচ্ছিল। তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন সিটি করপোরেশনে বড় পরিসরে ব্যবহার করে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে নিতে পারেনি।
২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি আগের ইভিএমকে অনেকটা অকেজো অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। তখন সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার হোঁচট খায়।
এরপর কে এম নূরুল হুদার কমিশন নতুন করে ইভিএম নিয়ে এগোয়। ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন পায়।
আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারও করা হয়।
এসব যন্ত্রের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরা হলেও পাঁচ বছরের মাথায় অধিকাংশ ইভিএম অকেজো হয়ে যায়। সেগুলো মেরামতে বড় অঙ্কের অর্থের সংস্থান আর পরে হয়নি।