নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন-কর্মসূচির সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে নানামুখী মতামত দিচ্ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সর্বশেষ সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অন্তত আড়াই ঘণ্টা পর্যালোচনা করেন। আপাতত কয়েকটি বৈঠকে রূপরেখা নিয়ে মতবিনিময় করবেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে কর্মসূচির সময়, পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ আলোচনায় নানা ধরনের মত উঠে আসছে। কোনও সদস্য সরাসরি রাজপথে কর্মসূচির পক্ষে মত দিয়েছেন। কোনও সদস্য সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে জাতির সামনে দাবি তুলে ধরার পক্ষে। কারও কারও দাবি আবার সর্বদলীয় ঐকমত্য কার্যকর হলে যুগপৎভাবে কর্মসূচির পক্ষে। সবমিলিয়ে কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়ন ও পদ্ধতি নির্ধারণ নিয়ে আরও আলোচনা করবেন তারা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন চলমান রয়েছে। এই রমজানেও ইফতার মাহফিলে হাজার হাজার নেতাকর্মীর জমায়েতের মধ্যদিয়ে আন্দোলনের বিষয়টিই প্রমাণ করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে গণসংযোগ চলছে।’
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দাবি, আন্দোলনের রূপরেখা বা পদ্ধতি নিয়ে বিএনপিতে কোনও দ্বিমত নেই। চলার মধ্য দিয়েই অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে এবং কর্মসূচিও সমন্বিতভাবে আসবে।
দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রভাবশালী একটি সূত্রের ভাষ্য, মূল দাবি হচ্ছে— নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ‘জাতীয় সরকার’। নিরপেক্ষ সরকারের ইস্যুটিকে কীভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে দল কী ঘোষণা দেবে বা কর্মসূচির মধ্যদিয়েই দাবিটিকে জনগণের কাছাকাছি নেবে, এ বিষয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সক্রিয় প্রবীণ একজন ভাইস চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন করে, সভা করে, সেমিনার করে। এসব স্বাভাবিক পদ্ধতিও অকার্যকর। তবে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে— এসব কর্মসূচি স্বল্প সময়ের জন্য সঠিক হলেও ‘সরকারপতনের’ জন্য যেমন আন্দোলন দরকার, সেটা বিএনপি কখনোই করেনি। সরকার পতনের আন্দোলনে ঘরে ফেরা বলে কিছু নেই। সেক্ষেত্রে শুরুতে ঝুঁকি থাকলেও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল হলে ধীরে ধীরে জনসম্পৃক্ততা বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা জনগণের কাছে আরও পরিষ্কার করবো। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য না। আমরা দেশের মানুষের স্বাধীনতা, মুক্তি ও দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিকেই কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।’
দলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ‘দাবি আদায়ের কর্মসূচি’ দিতে পারে বিএনপি। এক্ষেত্রে ধরন কী হবে, এ নিয়ে এখনও কোনও রূপকল্প তৈরি করেনি বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির সূত্রগুলো বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমমনাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কী ধরনের কর্মসূচি আশা করে, সেটা বিবেচ্য বিষয়। কোনও কোনও দলের নেতারা শুরুতেই ‘কঠোর কর্মসূচি’র পক্ষে থাকলেও কেউ কেউ ‘ধীরে ধীরে কঠোর’ হওয়ার পক্ষে। বিশেষ করে ‘আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আচরণ আমলে’ নিয়ে পদ্ধতি ঠিক করার মত দিয়েছে কোনও দল। সেক্ষেত্রে কেবল বিএনপির একক ইচ্ছার ওপর ‘আন্দোলনের’ রূপরেখা নির্ভর করছে না বলেও মনে করে সূত্রগুলো।
এ বিষয়ে বামপন্থী একটি দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত দেড়-দুই মাস ধরে বিএনপিকে ছত্রভঙ্গ মনে হচ্ছে। প্ল্যানিং, মোমেন্টাম ক্রিয়েট, পুরো প্রক্রিয়াটিকে টিউনিং করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতেই তাদের আগের চেয়ে অপরিকল্পিতভাবে লাগছে।
কর্মসূচি কী হবে, এ নিয়ে কোনও আলোচনা এখনও হয়নি, উল্লেখ করে এই নেতা দাবি করেন, দলের নেতৃত্বসহ নানা বিষয় রয়েছে, যেগুলোতে অবশ্যই বিএনপিকে সামনে থেকেই অবস্থান নিতে হবে। সর্বশেষ জামায়াতও তাদের অনশনে অংশ নিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির অবস্থান দোলাচল মনে হচ্ছে।