বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, কথার কথা হিসেবে এটি এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সফর থেকে ফিরে ২১ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমি বলেছি, নির্বাচনে আমরা সব দলকে চাই। সব দল মোটামুটি আসে। কিন্তু একটা বড় দল আছে তারা পাবলিকলি বলে, নির্বাচন করবে না। কেউ যদি ইচ্ছে করে করতে না চায়...। তারা জনগণকে ভয় পায়। কারণ তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেনি। আপনারা পারলে আনেন। আমরা তো সবাইকে আনতে চাই। তবে এটা কোনো প্রস্তাব আকারে দিইনি। কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। তারা ওই ধরনের জিনিসই (অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া) আশা করে। এজন্য তাদের আমরা আনতে পারি না। উনি (ব্লিঙ্কেন) বললেন, কেন আনতে পারেন না? তখন আমি বললাম, আপনি তাদের নিয়ে আসেন। দেখেন আপনি পারেন কিনা। বাকি সব দল আসে। তারা যদি না আসে, আমরা কী করব। উনি বললেন, না আসলে আপনারা তো কিছু করতে পারেন না।
ড. মোমেন বলেন, আমি বললাম, আমাদের দেশের গণতন্ত্র খুব ট্রান্সপারেন্ট। আমাদের দেশটা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। বাংলাদেশের প্রত্যেক লোক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এজন্য শতকরা ৭২ ভাগের নিচে কোথাও ভোট হয় না। ভোটের রেসপন্স বেশি। এটা উৎসব। আপনার দেশের মতো না, জোর করে লোক নিতে হয়; কেউ আসে না। আমাদের গণতন্ত্র অন্যদের শেখানো লাগবে না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ব্লিঙ্কেনকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আপনার রাষ্ট্রদূত আমাদের নির্বাচন দেখেছে। কোথাও কারচুপি হয়নি। আমাদের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আবার নতুন করে আমরা তৈরি করেছি। সবার গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ লোকদের নিয়ে করা হয়েছে।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কত সময় লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, র্যাবের বিষয়ে তারা বলেছে, এটা একটা প্রসেস। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমি সেটা বলতে পারব না। তারা ভালো জানে। আমি জানি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় রাশেদকে ফেরানো নিয়ে কোনো অগ্রগতির তথ্য আছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশেদ চৌধুরীর কথা বলেছি। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এটা স্টেট ডিপার্টমেন্টের না। ২০০১ সালে ক্লিনটন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হলেও পরের সরকার এসে এটা আটকে দেয়। এখন সেটি আবার রিভিউ করতে হবে। এটা এখন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে, তারা দেখবে। তবে এ বিষয়ে তাদের অ্যাপ্রোচ ভালো ছিল।
ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন বলে জানান ড. মোমেন। তিনি বলেন, ব্লিঙ্কেন ইউক্রেনের বিষয়ে বললেন, আপনারা নিজেদের প্রিন্সিপাল পজিশনে আছেন। তিনি প্রশংসা করেছেন।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, নির্বাচন ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে বলে যে খবর বের হচ্ছে, সেদেশে গিয়ে কোনো আঁচই পাননি বলেন জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এমনিতে যা শোনা যায়, আমেরিকা চাপ দেয়; এটা করে, ওটা করে। সেখানে সফরে গিয়ে দেখেছি, ধারের কাছে নেই। তারা আমাদের বিষয়ে পজিটিভ। যেগুলো শোনা যায়, ওরকম কিছু ওখানে নেই। তারা আমাদের পুরো সম্মান দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের খুব প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, আপনাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন করেছে এটার সবার জন্য লক্ষণীয়।
মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন নিয়ে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কথা ছিল বাংলাদেশের। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা— সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। জবাবে মোমেন বলেন, আমি এটা বলতে পারব না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন পুরো তথ্যনির্ভর নয় জানিয়ে মোমেন বলেন, তারা আমাদের ধর্মের ওপরে একটা আঘাত দিতে চায়। এটা আমরা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছি। ওরা তো আপনাদের পত্রিকা দেখে কিছু তথ্য পায়, আর কিছু এনজিও-টেনজিও থেকে পায়। এনজিওগুলো সবসময়ে বলে, বাংলাদেশ খারাপ। আর এক দল আছ, তারা বিদেশে আশ্রয় চায়। আমাদের কিছু বাংলাদেশি আমেরিকান দূতাবাসে চাকরি করেন, তারা প্রাথমিক ড্রাফটটা তৈরি করেন। তারা শুধু খুঁজে থাকেন কোথায় দোষ। আমাদের বাঙালির চরিত্রই এমন, অন্যের দোষ বের করা। দেখুন, দুনিয়ার সব দেশে অসুবিধা হয়। কিন্তু দোষটা হয় শুধু বাংলাদেশের।