ডেভিল হান্টেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২২

দেশ জুড়ে চলমান যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ঘটছে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এমনকি নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের সদস্যরাও।
সব মিলিয়ে দিনে দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ নিয়ে দফায় দফায় পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করছেন। কিন্তু নানা কৌশল খাটিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারছে না তারা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বাহিনীটির সব ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েও সুফল মিলছে না।
এমন পরিস্থিতিতে যেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে, সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডাকাতির ঘটনা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ। শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে অন্য অপরাধীরাও জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসছে। কয়েক মাস ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ধারায় রয়েছে। চিহ্নিত সস্ত্রাসীরা কারামুক্ত হওয়ার পর থেকেই অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। যারা জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে এসেছে তাদের তালিকা করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পাড়া-মহল্লার গলিপথ থেকে শুরু করে প্রধান সড়কেও চলাচলের সময় নগরবাসীর মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক ভর করে থাকছে। সন্ধ্যা নামলেই ছিনতাই-ডাকাতির আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে রিকশা আরোহীর ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। সর্বস্ব লুট করা ছাড়াও ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে।
গত জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ৭১টি ডাকাতি, ১৭১টি ছিনতাই, ২৯৪টি খুন এবং ১০৫টি অপহরণের মামলা হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীতে ৮টি ডাকাতি, ৫৪টি ছিনতাই, ৩৬টি খুন এবং ৩১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসে অপরাধের সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ২০২৪ সালে সারা দেশে ৪৯০টি ডাকাতি, ১ হাজার ৪১২টি ছিনতাই, ৩ হাজার ৪৩২টি খুন এবং ৬৪২টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। ওই বছর ঢাকায় ৪১টি ডাকাতি, ২৪৮টি ছিনতাই, ৩৩৯টি খুন ও ১৩২টি অপহরণের মামলা রেকর্ড হয়।
রাজধানীর উত্তরা থেকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস যাচ্ছিল সদরঘাটের দিকে। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় আসার পর চলন্ত বাসে যাত্রীবেশে থাকা পাঁচ-ছয়জন সশস্ত্র যুবক যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকাসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়ে ওই যুবকরা। এ সময় রাস্তায় ছিল না পুলিশের কোনো টহল গাড়ি বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। প্রতিকারের কোনো পথ দেখতে না পেয়ে অসহায় যাত্রীরা চলে যান নিজ নিজ গন্তব্যে।
তার আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারে আরেকটি চলন্ত বাসে একইভাবে দিন-দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর পথে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে ডাকাতির সময় শুধু যাত্রীদের টাকাপয়সা ও মালপত্র লুটে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ডাকাতরা, বাসটির নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়েও মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কেওঢালা এলাকায় র‌্যাব সদস্য পরিচয়ে বাস থামিয়ে প্রবাসফেরত দুই যাত্রীকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। পরে তাদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। শুধু এ চারটি ঘটনাই নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে চলছে অভিযান।
গত শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তিনজনকে। চরমপন্থি দল জাসদ গণবাহিনীর নেতা পরিচয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে এক ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ডের দায়ও স্বীকার করেছে।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার ভোরে ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবোতে নিজ বাড়িতে অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি আলোচনায় এসেছে। ডাকাতিতে বাধা দিলে ডাকাতরা এ অভিনেতাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েকশ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে।’
আদালতে দায়িত্ব পালন করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাবপ্রধান বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের কার্যকলাপ ও এর ভয়াবহতা জনজীবনে কী পরিমাণ অশান্তি তৈরি করছে, তা আদালতে তুলে ধরেন, যাতে করে আদালত জামিন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ছিনতাই, দস্যুতা, ডাকাতির মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে শহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাণান্তকর চেষ্টার মাধ্যমে এ অপরাধগুলো দমনে চেষ্টা করব। কেউ অপরাধের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করুন।’

অপরাধ বাড়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা : গাজীপুরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুর এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান। যার নাম দেওয়া হয় ‘ডেভিল হান্ট’। এ অভিযানে এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮ হাজা ৬৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও দাগি বা আলোচিত কোনো অপরাধীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এ অভিযানের মধ্যেই খুন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও বেড়েছে। সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য নিহত হয়েছে। তারপরও উঠতি বয়সী অপরাধীদের তৎপরতা থামছে না। এ প্রসঙ্গে হতাশা প্রকাশ করে নগরবাসীর অনেকেই বলছেন, ‘ডেভিল হান্টের মাঝেও ডেভিলের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’
অপরাধে জড়াচ্ছে পথশিশুরাও : পথশিশুরাও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সারা দেশে খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল বা বাসস্টেশনে বসবাস হাজারো পথশিশুর। যার অর্ধেকেরই বাস রাজধানী ঢাকায়। বিভিন্ন বস্তি ও স্টেশনসহ ২২৯টি স্পটে পথশিশুরা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব শিশু-কিশোর বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। আর মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে তারা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১১ লাখের বেশি।

গণঅভ্যুত্থানে গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত পুলিশের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা পালিয়ে যান। পুলিশের অনেক স্থাপনা ও যানবাহন আক্রান্ত হয়। ওই পরিস্থিতিতে কার্যত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায়, যা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুলিশকে সহায়তা করতে শুরু থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে চালু করা হয়েছে সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার। কিন্তু অজানা কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করা হয়েছিল। এরই মধ্যে অভিযানে ৪ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও ১ হাজার ৩৮৪টি অস্ত্রের হদিস মিলছে না। এসব অস্ত্র দাগি অপরাধীদের হাতে চলে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তারা চাপের মধ্যে আছেন। ডেভিল হান্টের মতো অভিযানেও অপরাধের লাগাম টানা যাচ্ছে না তা সত্য। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, যেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে সেখানকার পুলিশ কর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের পাশাপাশি পথশিশুরাও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের পরিচয়ও পাল্টে গেছে। চরমপন্থিরাও আগের চেয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জামিনে কারামুক্ত হওয়ায় তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা অপরাধে বেশি জড়িয়ে পড়ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আহসানুল জাবের বলেন, ‘মাদকাসক্ত শিশু-কিশোররা নেশায় বুঁদ হয়ে ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ চালাচ্ছে। তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে না পারলে সমাজের সমস্যা হবে। অভাবের তাড়নায় পথশিশুরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের সংশোধনের বিকল্প নেই।’
অনেক অপরাধ বিশ্লেষক বলছেন, পেশাদার পুলিশিং হচ্ছে না বলেই এমনটি হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা গণঅভ্যুত্থানবিরোধী পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের মতে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এ বাহিনীতে নিয়োগের সময় বেছে বেছে আওয়ামীপন্থিদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অপরাধীরা এখন যতটা সক্রিয়, পুলিশ ততটা নিষ্ক্রিয়।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরের এ-ব্লকের ২০ নম্বর লেনে মা-মনি স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের তালা কেটে মালপত্র লুট করে দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে ওই এলাকার দুটি বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী দোকান মালিক রুবেল মিয়া বলেন, ‘২৮ বছর ধরে একই ঠিকানায় দোকান করছি। এ ধরনের দুর্ধর্ষ ঘটনা কখনো ঘটেনি। নগদ টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালপত্র নিয়ে গেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। পুলিশের টহল নেই এলাকায়।’
একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে মহাসড়কেও। রাতের বেলায় পুলিশের টহল থাকে না বললেই চলে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে রাতে এক সাংবাদিক দম্পতি কক্সবাজার থেকে বাসে করে ঢাকায় আসছিলেন। তারা জানান, পথে ইলিয়টগঞ্জ বাজারের আশপাশে যানবাহনে ডাকাতি হচ্ছিল। ঘটনাস্থলের একশ গজ দূরে হাইওয়ে পুলিশের টিম থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাসার সামনে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন অস্ত্রধারী দুজন রিকশা আরোহীকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রী এলাকায় কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা জুয়েলকে গুলি করে তারই দলের আরেকটি গ্রুপ। দুদিন আগে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ধারালো অস্ত্রের মুখে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নারী পোশাককর্মীকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে ছিনতাইকারীরা আবু রায়হান ইভান নামে এক শিক্ষার্থীকে ছুরি মেরে ৪৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার ঢাকার আদাবরে প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিন-চারজনের একটি দল রাসেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘অপরাধীদের দৌরাত্ম্য যতটা বাড়ছে, আমাদের তৎপরতা তার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কাগজে-কলমে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মাঠে তা নেই। অনেকে গা-ছাড়াভাবে চলছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশের দুর্বলতাগুলো আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ডেভিল হান্টের মতো অভিযানে অপরাধ দমনে তেমন একটা সফলতা আসছে না। বড় মাপের অপরাধী এখনো ধরা সম্ভব হয়নি।’