নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়ানো হবে আমদানি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০০:১৩

বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে নন ট্যারিফ বাধা দূর করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সরকারের আরও তিন উপদেষ্টা, বেশ কয়েকজন সচিব, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে আমরা আমেরিকা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবো। আমেরিকা থেকে আমরা এলএনজি এবং অন্যান্য জিনিস ইমপোর্ট করব। সো দ্যাট তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় হয়। আর আমাদের এখান থেকে যা এক্সপোর্ট হয় আমরা করব।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্যরা যাতে আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিযোগীদের তুলনায় আমরা এখানে সে অ্যাকশন নিবো। আমেরিকানরা মনে করে বাংলাদেশি পণ্য বেটার, অন্য দেশের তুলনায়। সেটাকে আমরা আরেকটু বাড়াবো। অন্যান্য সার্ভিস আমরা আমেরিকা থেকে আনতে পারব।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, নন ট্যারিফ অনেক ব্যারিয়ার থাকে। এই যে ৫২, ৫৪ শতাংশ সংখ্যা আমরা দেখি, এর বাহিরে অফিসিয়াল রেগুলেটরি অনেক রকম সুবিধা-অসুবিধা থাকে। আমেরিকার ব্যবসায়ীরা যাতে এগুলোর সম্মুখীন না হয়, এগুলো যত দ্রুত সম্ভব আমরা যুক্তিযুক্ত করব। এটাকে আরও স্মুথ করব। যাতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও প্রসার লাভ করে।
এসময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমদানি করার ব্যাপারে আমেরিকা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তাতে করে অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি- চীন, ইউরোপ তারাও এর বিপক্ষে কতগুলো পদক্ষেপ নেবে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা পুরো জানিনা। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি কোথায় যাবে, বড় ধরনের নাড়াচড়া খাবে- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমরা সবকিছুই মাথায় রাখছি। আপাতত আমরা আমাদের প্রধান যে রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় বাজার সেটা রক্ষা পায়, আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা যাতে আরো বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি- সে চেষ্টা করব। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যে করটা বাড়ানো হলো এটা যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে তাদের বক্তিদের ওপর পড়বে। মধ্যসত্ত্বভোগী যারা বাইং হাউজ, তাদের ওপর পড়বে। আমাদের ওপর কতটুকু পড়বে তার একটা বোঝাপড়া হতে হবে। আমরা এটুকু জানি শ্রমিকের মজুরির দিক থেকে আমরা একেবারে সর্বনিম্ন জায়গায় আছি। এর থেকে আর কমানো যাবে না এখানে। কাজেই করের বাড়তি বোঝা অন্য জায়গাতেই শিফট হবে। আমেরিকার যারা পলিসি ঠিক করেন তারাও জানেন আমাদের দিক থেকে এরচেয়ে বেশি শ্রমিকদের খরচ কমানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প আছে যেটা বিশ্বমানের উৎপাদনশীলতা সক্ষম এবং সেখানে আমরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব বলে মনে করি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক এবং এটাকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েটলি আমরা কীভাবে উপস্থাপন করব সে লক্ষ্যেই আমাদের আজকের আলোচনা।
তিনি বলেন, আমাদের ট্যারিফ রিলেটেড না মানে নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা যেগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক না, আমরা সেগুলোকে রহিত করার বা পুনর্মূল্যায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান এসময় বলেন, আমাদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের আমদানি বেশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা তার উপায়গুলো খুঁজছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যাতে করে এই বিষয়টি অতিসত্তর আমরা নিষ্পত্তি করতে পারি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজকে যে আলোচনাটি হয়েছে সেখানে আমরা সবাই এক সমতলে আছি। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যে রাষ্ট্রদূত আছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজনটিভ অফিসে গতকাল কথা বলেছেন। সেখান থেকেও আমরা যে সংকেত পাচ্ছি সেটাতেও আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে মিল আছে। সুতরাং আমরা মনে করছি, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আমাদের প্রজেকশনগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে পারব। এই কথাগুলো অনেক দিন ধরে আলোচনা হয়ে আসছে আমাদের ভিতরে। আপনারা আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর একটা প্রতিফলন দেখতে পারবেন।