চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী নেতার সেলফ স্টিকের (আত্মরক্ষার জন্য এক ধরনের লাঠি) আঘাতে মাথা ফাটল উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতার। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত নেতা হলেন উপজেলা এনসিপির সদস্য নাজমুস সাকিব তামিম। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন সংগঠনটির নেতারা। মিছিলটি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ‘চাঁদাবাজের ঠিকানা, এ বাংলা হবে না’, ‘নাজমুস সাকিবের ওপর হামলা কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রশাসন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দক্ষিণ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিলের সঙ্গে এনসিপির সদস্য মো. যামীমের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে শাকিল ও যামীমের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এনসিপি নেতা তামিম উভয়কে শান্ত করতে গেলে শাকিল সেলফ স্টিক দিয়ে তার মাথা আঘাত করেন। এতে তামিম গুরুতর আহত হন। এছাড়াও হাতাহাতিতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
নাজমুস সাকিব তামিম বলেন, ‘শাকিল পরিকল্পনা করেই সেলফ স্টিক নিয়ে এসেছিল। সে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার উদ্দেশে আমার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে গেছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল বলেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমার ছোট বোন জান্নাতুল রেখা ঝর্ণাকে নিয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় আমাকে নাগরিক কমিটির কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টেনে-হেঁচড়ে কিল-ঘুষি মেরে আহত করেন।’ এ সময় উপস্থিত বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার উভয়পক্ষকে শান্ত করেন।
নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবদলের হামলা, ইউএনও লাঞ্ছিত
নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে হামলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবদলের কয়েকজন পদধারী নেতার বিরুদ্ধে। এসময় ওই নেতারা মঞ্চ থেকে শিল্পীদের নামিয়ে দেওয়াসহ সামনে বসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্যান্য অতিথিদের লাঞ্ছিত করেন। ছিঁড়ে ফেলে দেন অনুষ্ঠানের ব্যানার। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি।
সোমবার দুপুরে আটপাড়া উপজেলা মুক্তমঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালীন ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’ এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল।
এসময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন ওরফে কাইয়ুম, কামাল হোসেন তালুকদারসহ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। পরে তাঁরা ইউএনওকে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন।
এ সময় ইউএনও কারণ জানতে চাইলে মঞ্চের ব্যানারে স্থান হিসেবে কেন ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা হয়েছে, এ কথা বলে যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মঞ্চে ওঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ইউএনওসহ কর্মকর্তারা তাদের বাধা দিতে চাইলে ওই নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে এক নেতা উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন- ব্যানারে তো কোনও ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ আবারও বলেন, না ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেইসবুকেও ব্যানারের ছবি পোস্ট আছে। আমার ফোনেও এ ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনই বন্ধ করতে হবে। বিশৃঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায় ফেসবুকে পোস্ট করা ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’র ওই ছবিটি বাংলা সন ১৪৩০ এর।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম, কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকেসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আটপাড়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান বলেন, আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেন। ওই ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা ছিল। ফেসবুকেও একজন শেয়ার দিয়েছেন দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় আমাদের দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন, কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল, সদস্য সচিব রুপণ, ছাত্রদলের টিটুসহ কয়েকজন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন যে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এর জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, যখন এ ঘটনাটি ঘটেছে তখন আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। অভিযোগ পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী জানান, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।