ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা বিব্রত : উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪০
আপডেট  : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:২১

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
এর আগে, ১০ এপ্রিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, যা মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামে পরিচিত।
এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) আবদুল মান্নান। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, আরেক এমএনএ অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এম এ জি ওসমানীকে।
মুজিবনগরে তৎকালীন সাবডিভিশনাল পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমদের (বীরবিক্রম) নেতৃত্বে নবগঠিত সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
দিবসটি উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক) আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপদেষ্টা।
ফারুক-ই-আজমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর একান্ত সচিব লে. কর্নেল (অব.) মো. আবদুল গাফফার, তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন এবং সহকারী একান্ত সচিব আমিরুল ইসলাম।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আলোচনা সভা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শতাধিক তরুণ-যুবক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঢুকে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ নামে ভাস্কর্যটিসহ অন্য ভাস্কর্যগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, 'এবার বড় পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালন করা হচ্ছে না। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো আবার নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।'

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা বিব্রত : উপদেষ্টা ফারুক ই আজম 
“ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা বিব্রত অবস্থা পড়েছে এছাড়া যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করছে এটি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  প্রায় ৩ হাজার রিট মামলা রয়েছে কিছু মামলায় রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি।” বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে যে ক্ষতি হয়েছে, তা সংস্কার করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছানো হবে না এবং কোন কিছু আরোপিত করা হবেনা।”  পরে তিনি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানকারী ২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন।