দুই আসামি জবানবন্দি প্রত্যাহার করলে শিশুটিকে আদালতে যেতে হতো না

আইন উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:৪২

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় দুই আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তারা এ জবানবন্দি প্রত্যাহার করলে শিশুটিকে আদালতে যেতে হতো না বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে। যে মামলা তদন্তের মধ্যে থাকে, সেই মামলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়ার অধিকার শুধু পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আছে। যদি একটি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) হয়ে যায়, শুধু তখন আইন মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহার করার এখতিয়ার বা সুযোগ থাকে।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যেসব ষড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছিল, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তখনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশপ্রধানের (আইজিপি) সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম ওই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি যেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা অনুযায়ী তারা সব মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দিয়েছে বলে জেনেছিলাম। তবে জানানো হয়েছিল, অল্প কিছু মামলা এখনো রয়ে গেছে, যেগুলো হত্যাসংক্রান্ত। এই শিশুটির মামলা এমন একটি মামলা, যেখানে দুইজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসিফ নজরুল বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি আসামিরা যদি ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহার না করেন, তাহলে এই মামলার নিষ্পত্তি বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া খুবই দুষ্কর। এটা সম্পূর্ণ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, যতই সদিচ্ছা থাক, একটি মামলা চার্জশিট পর্যায়ে আসার পরই কেবল আইন মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারে। তার আগে কোনো কিছু করার সুযোগ আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে আশা করছি যারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তারা যেন সেটি প্রত্যাহার করার পদক্ষেপ নেন। যাতে করে এই মামলাটি খুব দ্রুত প্রত্যাহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, এই শিশুর ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। তাকে বলেছি, এটাই হচ্ছে প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যদি এগোনো হয়, তাহলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আইন দ্বারা পরিচালিত। যেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, সেটা আইন মন্ত্রণালয় করতে পারবে না। যেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতে পারবে না। যেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ, সেটা মৎস্য মন্ত্রণালয় করতে পারবে না। এটা সবার বোঝার কথা। যতই প্রত্যাশা থাক, যতই আন্তরিকতা থাক, যতই ইচ্ছা থাক, এই কাজটি প্রক্রিয়াগতভাবে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অন্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার- আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। তাদের পরামর্শ ও অনুরোধ করা ছাড়া কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, এই মামলায় যে দুইজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, যেটা (জবানবন্দি) আমি বিশ্বাস করি পুলিশ অত্যাচার করে, নির্যাতন করে বা ভয় দেখিয়ে নিয়েছে। এই সরকার এসেছে আট মাস হয়ে গেছে, সেটা (জবানবন্দি) এখনো কেন তারা প্রত্যাহার করে নেননি? এটা করলে (জবানবন্দি প্রত্যাহার) আজ এই শিশুটিকে আদালতে যেতে হতো না।