ফেনীর সোনাগাজীতে আবুল হাসেম (৪০) নামের বিএনপির এক কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ মঙ্গলবার সকালে সোনাগাজী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের ওলামা বাজারের ইসলামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা বোরকা পরে এসে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাসেল (৩৫) নামের এক যুবককে আটক করছে পুলিশ।
নিহত আবুল হাসেম সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ছেলে। তিনি সোনাগাজী পৌরসভার ইসলাম মুহুরি রোড এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। নিহত আবুল হাসেম সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিয়াস চেয়ারম্যানের সহযোগী ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে আবুল হাসেম সোনাগাজী পৌরসভার ইসলাম মুহুরি রোড এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে চরদরবেশ ইউনিয়নের ওলামা বাজার এলাকায় পৌঁছালে বোরকা পরা কয়েক ব্যক্তি তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কোপানো হয় তাঁকে। পরে দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় আবুল হাসেমকে উদ্ধার করে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত হাসেমের ভাতিজা মোহাম্মদ টিপু বলেন, তাঁর চাচার সঙ্গে প্রতিবেশী বেলাল নামের এক ব্যক্তির জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। ২০২১ সালের ৩১ মে দুই পক্ষের মারামারির সময় বেলাল মারা যান। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আবুল হাসেম। তিনি প্রায় তিন বছর কারাগারে থেকে কয়েক মাস আগে জামিনে বেরিয়েছিলেন। সেই ঘটনার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চরচান্দিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম হোসেন বলেন, আবুল হাসেম বিএনপির কর্মী ছিলেন। তাঁর হত্যার ঘটনায় আটক রাসেল সম্প্রতি ফেসবুকে আবুল হাসেমকে উদ্দেশ্য করে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ আকন বলেন, খবর পেয়ে থানা-পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে আটক করেছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার
চট্টগ্রামের রাউজানে মুহাম্মদ ইব্রাহিম (৩০) নামে এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার গাজীপাড়া গ্রামের বাজারের একটি দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনটি অটোরিকশায় করে ১০-ে১২ জনের একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার মাথায় ও বুকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ সময় তার বাবা মুহাম্মদ আলম ও চাচা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিমকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়া হয়। গায়ে গুলি না লাগলেও পালাতে গিয়ে পড়ে তারা আহত হয়েছেন।
নিহত ইব্রাহিম রাউজান সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শমশের নগর গাজীপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমের মাথায় ও বুকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুরে ইব্রাহিম বাড়ির দেড় কিলোমিটার দূরে একটি দোকানের সামনে বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তিনটি অটোরিকশায় এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার মাথার একদিকে গুলি ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে।
নিহতের চাচা আবদুল হালিম বলেন, ‘ইব্রাহিমকে আমার সামনেই গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এগিয়ে গেলে আমাকে লক্ষ্য করেও তিন চারটি গুলি ছোড়া হয়। আমি ও আমার বড় ভাই কোনো রকমে পালিয়ে বেঁচে গেছি।’
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বিস্তারিত জানাব।