শিগগির দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

‘সক্রিয় বিবেচনায়’ তারেক
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৩৩

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শিগগির দেশে ফিরবেন তিনি। যদিও ফেরার নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই সঙ্গে দেশে ফিরবেন বলে শোনা গেলেও তিনি এখনই ফিরছেন না। তবে দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন তিনি।
দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েকদিন ধরে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, মে মাসের মধ্যেই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন। সঙ্গে থাকতে পারেন তার দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শামিলা রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ম্যাডাম দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ফেরার তারিখ নির্ধারণের আগে তার চিকিৎসকদের মতামত ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয় রয়েছে। দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে আনতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম শিগগির দেশে ফিরবেন।’
চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই আলোচনা ছিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। বহুল আলোচিত একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ অধিকাংশ মামলায় তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগ মুহূর্ত থেকে আলোচনা ওঠে, হয়তো ছেলেকে নিয়েই তিনি দেশে ফিরবেন।
দলের সিনিয়র নেতারাও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। দেশে ফিরতে খুব বেশি আইনি জটিলতা নেই বলেই দাবি তাদের। তাহলে দেশে ফিরছেন না কেন, কিংবা দেশে ফেরার বিষয়ে তিনি এখন কোন অবস্থানে আছেন?
তার জন্য তো মামলা কোনো বাধা হতে পারে না। মামলা কোনো বাধা ছিল না, এখন পর্যন্ত নেই। অবশ্যই তিনি দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন। যথাসময়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।-বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার আইনজীবী এবং বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রচলিত নিয়ম ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার জন্য তো মামলা কোনো বাধা হতে পারে না। মামলা কোনো বাধা ছিল না, এখন পর্যন্ত নেই। অবশ্যই তিনি দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন। যথাসময়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।’

খালেদার চিকিৎসা ও আইনি প্রেক্ষাপট:
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানান জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তার লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক রোগ রয়েছে বলে জানায় দলীয় সূত্র।
২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি কারাবন্দি হন। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবে শর্ত ছিল তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
গত কয়েক বছরে একাধিকবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমতি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর তিনি জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন।
খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডন থেকে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওনাকে টাইম টু টাইম দেখছেন। ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’
লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর ডা. জাহিদ হোসেন ওই সময় (৭ জানুয়ারির পরপরই) কিছু আপডেট জানিয়েছিলেন। তিনি সে সময় জানান, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস, পরবর্তীসময়ে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেড-টু, সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি) করা হয়েছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখতে হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না।
ডা. জাহিদ আরও জানান, ওনার আরও যে ব্লক আছে, সেটা অ্যাড্রেস করা দরকার, ওনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটা অ্যাড্রেস করতে হবে। করোনা পরবর্তীসময়ে কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশে এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া যে চিকিৎসা পেয়েছিলেন তাতে পরিবারের সদস্যরাও সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।

খালেদা জিয়া ফিরলে দলের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?
বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে খালেদার দেশে ফেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ‘ম্যাডাম দেশে ফিরলে দলীয় কর্মসূচি নতুন করে গতি পাবে। কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবে। তবে তার শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে তিনি কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
ম্যাডাম দেশে ফিরবেন এটা দলের পক্ষ থেকে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। উনি আগের চেয়ে সুস্থ। উনি দেশে ফিরলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ম্যাডাম যৌথভাবে দল গঠনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘ম্যাডাম দেশে ফিরবেন এটা দলের পক্ষ থেকে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। উনি আগের চেয়ে সুস্থ। উনি দেশে ফিরলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ম্যাডাম যৌথভাবে দল গঠনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না যতক্ষণ না তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। তিনি যদি রাজনীতিতে সক্রিয় হন তাহলে রাজনীতিতে তার প্রভাব দৃশ্যমান হবে।’
তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খালেদা জিয়ার সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কঠিন হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তার শারীরিক অবস্থা ও সরকারি বিধিনিষেধ বিবেচনায় রেখে বিএনপিকে নতুন ধরনের কৌশল ঠিক করতে হতে পারে।