'পদত্যাগ' ইস্যুতে অস্থির উপদেষ্টা পরিষদ

প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ ইচ্ছা’ ঘিরে নতুন মাত্রা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৩ মে ২০২৫, ২০:০৭

দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে পদত্যাগ ইস্যু এখন আরও প্রকট ও স্পষ্ট সংকটে রূপ নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই ঘোষণায় চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এদিকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্যের পদত্যাগ দাবি উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ, জুলাই ঐক্যসহ একাধিক সংগঠন বিভিন্ন উপদেষ্টাকে ‘জনআস্থা বিচ্যুত’, ‘বিতর্কিত’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের অপসারণ দাবি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ-ইচ্ছার ইঙ্গিত এবং উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপ সরকারের জন্য এখন একটি বড় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের স্থিতিশীলতা, সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সময়কাল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার প্রশ্ন এখন সরকারের সামনে এক কঠিন পরীক্ষার মতো।
বিএনপি কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব। তাদের দাবি অনুযায়ী, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, মাহফুজ আলম, সজীব ভুঁইয়া এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন—“জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্য আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আমরা বহুবার সরকারের অভ্যন্তরে থাকা ফ্যাসিবাদপন্থীদের সরানোর দাবি জানিয়েছি।”
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর বিভিন্ন সময়ে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন— “ক্ষমতার দালালি করে এমন উপদেষ্টারা জনগণের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এরা সরকারে থাকার যোগ্য নন।”
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন একইভাবে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের অপসারণ দাবি করে বলেন— “আস্থাহীন, অযোগ্য এবং বিতর্কিত উপদেষ্টারা দায়িত্বে থাকলে পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সরাসরি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন— “তিনি নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং বিভাজনমূলক ভূমিকা পালন করছেন।”
জুলাই ঐক্য (সামাজিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম) আরও এক ধাপ এগিয়ে আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদারকে 'ভারতের চর' বলে অভিযুক্ত করে তাদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
তাদের ভাষায়— “সন্দেহজনক চরিত্রের এমন লোকজন সরকারের উচ্চপর্যায় দখল করলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।”
সরকারি দপ্তর থেকে এখনো এই দাবিগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে এই চাপ সরকারের স্থায়িত্ব এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য পদত্যাগের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপদেষ্টাবর্গের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অতীত কর্মকাণ্ড ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক শুধু সরকারের ওপর জনগণের আস্থা দুর্বল করছে না, একইসঙ্গে একটি সম্ভাব্য অন্তর্ঘাতমূলক পরিস্থিতিরও জন্ম দিচ্ছে। সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের ভেতরেও এই সংকটের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।