অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারি আনুকূল্যের ধারা স্পষ্ট হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে-সব প্রতিষ্ঠান ছিল নানা বিধিনিষেধের মধ্যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তা বদলে যেতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে সরকারি অনুমোদন, করছাড় এবং ব্যবসায়িক সুবিধা পেতে শুরু করেছে। তবে এ নিয়ে ‘স্বার্থের সংঘাত’ এবং ‘স্বচ্ছতা’র প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মহল।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যে-সব উল্লেখযোগ্য অনুমোদন বা সুবিধা পেয়েছে গ্রামীণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো:
গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি:
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই অনুমোদন পেয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অনুমোদিত প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (জিইএসএল):
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স (RL No. 2806) ও এপ্রিল মাসে বায়রা সদস্যপদ পেয়েছে। ২০০৯ সালে এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হলেও আগের সরকার তা অনুমোদন দেয়নি।
সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড (গ্রামীণ টেলিকমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান):
২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার (PSP) লাইসেন্স পায়। ২০২১ সালে আবেদন করেও দীর্ঘদিন অনুমোদন পায়নি।
গ্রামীণ ব্যাংকের করছাড়:
২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর এনবিআর থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের কর অব্যাহতি পায়। পূর্ববর্তী সরকার ২০২০ সালে এই করছাড় বাতিল করেছিল।
গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন:
২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল সরকার মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে এবং বাকি শেয়ার গ্রাহকদের মধ্যে বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়।
মামলা খারিজ ও স্বচ্ছতা বিতর্ক
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ঢাকার একটি আদালত তাঁকে অর্থপাচার মামলায় খালাস দেয়। একই সময়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তাঁর ছয় মাসের সাজাও খারিজ হয়ে যায়। দ্রুত এসব নিষ্পত্তি হওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত এবং স্বার্থের সংঘাত থেকে মুক্ত থাকা উচিত।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ বিষয়ে বলেন, “যদি কেউ মনে করেন সরকার কোনো পক্ষপাত দেখিয়েছে, তাহলে তদন্ত করে প্রমাণ দিন। এই প্রতিষ্ঠানের কোনোটি ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। তিনি স্রেফ একটি মডেল দিয়েছেন, যেটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এমনকি আগের সরকারের আমলেই এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে সেগুলো আটকে ছিল। বর্তমান সরকার সেগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনায় অনুমোদন দিয়েছে।”