বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে মর্মে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ আপাতত বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। স্থগিতাদেশ না দিয়ে হাইকোর্টে আগামী ২২ জুনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত রুল শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে রোববার (১ জুন) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ।
আইনজীবীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় আসামি গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের এমন সিদ্ধান্ত (অফিস আদেশ) স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল থাকছে। এ-সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা মামলায় আসামি গ্রেফতার প্রসঙ্গে গত ৯ এপ্রিল অফিস আদেশ জারি করা হয়। এই অফিস আদেশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন ২০ এপ্রিল রিটটি করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় আসামি গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এমন সিদ্ধান্তের (অফিস আদেশ) কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। রুলে ৯ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত (ডিএমপির) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা গত ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি (সিএমপি) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে। আগের ধারাবাহিকতায় আজ আবেদন দুটি একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ২৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানিতে ছিলেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন।
আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘স্থগিতাদেশ দেননি আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকছে। স্থগিতাদেশ না দিয়ে হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত রুল শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।’ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ বলেন, ‘তিন মাসের জন্য হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল ও আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে অবকাশ শেষে আদালত খোলার (২২ জুন) দুই সপ্তাহের মধ্যে এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে কমিশনারের পক্ষে ৯ এপ্রিল ‘অফিস আদেশ’ জারি করেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন। অফিস আদেশের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।