রংপুরে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় আসকের নিন্দা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৯ জুলাই ২০২৫, ২৩:৫৯

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নে সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে পরিকল্পিত হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
কেবলমাত্র এক কিশোরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে যেভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে আসক জানায়, এটি একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ, যা বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকারকে প্রত্যক্ষভাবে লঙ্ঘন করে।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অভিযুক্ত কিশোর স্থানীয় এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। পুলিশ তাকে আটক করে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় এলাকায় একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক মাইকিং করে উসকানিমূলক প্রচার চালায়। পরে সংঘবদ্ধভাবে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বহু বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয় এবং ওই এলাকার সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আসক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ধারাবাহিকতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এ ধরনের হামলার ঘটনায় বারবার দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা অধিকাংশ সময়ই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি দেশে বিচারহীনতার এক ভয়ংকর নজির তৈরি করছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৪১ অনুচ্ছেদ সব নাগরিককে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বৈষম্যহীনভাবে সমতা ও নিরাপত্তা এবং ধর্মচর্চার স্বাধীনতা দেয়। এই সাংবিধানিক অধিকার বারবার লঙ্ঘিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।
এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আসক। পাশাপাশি আক্রান্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত, তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় উসকানি ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়।
আসকের মতে, এই ঘটনার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। যারা সরাসরি হামলায় যুক্ত এবং যারা দায়িত্বে থেকেও তা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে- উভয়েরই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হবে মানবাধিকারের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একমাত্র পথ।