তদ্বিরের জোর

সাদিয়া ফয়জুন্নেসা এখন  মরক্কোয় রাষ্ট্রদূত 

​​​​​​​ ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৩ জুলাই ২০২৫, ২৩:১৩

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত একমাত্র নারী কূটনীতিক সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, যিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামত পদোন্নতি ও পদায়ন লাভ করেন। নিউইয়র্ক ছাড়ার পর পদোন্নতি নিয়ে নিজের পছন্দে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। চাকরি জীবনে বেশিরভাগ সময় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আনুকূল্য পেয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অল্প কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন। এরপর খোলস বদলে বাগিয়ে নিয়েছেন আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় রাষ্ট্রদূতের পদায়ন। সম্প্রতি তিনি সেখানে যোগদান করেছেন। 
জানা গেছে, মরক্কোর রাবাতের বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা মরক্কোর পররাষ্ট্র ও আফ্রিকান সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী নাসের বোরিতার কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। কিন্তু তার এই যোগদানের খবরটি অনেকটা চাপিয়ে রাখা হয়েছে। ফলাও করে কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। সরকারের পতনের পর আত্মগোপন করেছেন জিয়াউদ্দিন। ফ্যাসিস্টের দোসর হিসাবে বহু আমলা চাকরি হারালেও সাদিয়া ফয়জুন্নেসা খারাপ সময়টা উৎরে যান। এরপর বাগিয়ে নেন মরক্কোয় পদায়ন। 
২০১৮ সালের ১ জুন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল হিসাবে যোগদান করেন বিসিএস ১৮তম ব্যাচের (পররাষ্ট্র ক্যাডার) কর্মকর্তা সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে সরাসরি সেবা বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা ডাকযোগে আবেদন পাঠাতেন। আবেদনের সঙ্গে মানি অর্ডারের অর্থও জমা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এসব আবেদনপত্র কনস্যুলেটে পৌঁছলেও অফিসিয়ালি আর জমা দেখানো হয়নি। প্রেরক কোনো রশিদও পাননি। ভূক্তভোগীরা না পেয়েছেন পাসপোর্ট, না পেয়েছেন নো-ভিসা। ওইসময় কনস্যুলেট থেকে দুই শতাধিক প্রবাসীর ফিসহ পাসপোর্ট, নো ভিসা রিকোয়ার্ড এবং অন্যান্য সেবা চেয়ে করা আবেদনপত্র গায়েব হয়ে যায়। আবেদনকারীদের প্রায় ৭০ হাজার ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত করে এর সত্যতা পায়। 
যাদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ তাদের রক্ষা করেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার পদোন্নতি আটকে দিয়ে তাকে ভারতের মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনার হিসাবে বদলী করে। কিন্তু ওপর মহলে তদবিরের জোরে রক্ষা পান সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় জিয়াউদ্দিন আহমেদ অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তার। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ডিঙ্গিয়ে জিয়াউদ্দিনের মাধ্যমে নিজের সব বাধা অতিক্রম কাটিয়ে ওঠেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। বরং কনসাল জেনারেল হিসাবে বদলী ঠেকিয়ে রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রমোশন নিয়ে চলে যান ব্রাজিলে। কেন তিনি ব্রাজিল বেছে নিলেন তা নিয়েও রয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।  
এদিকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের তদন্তে অর্থ তছরুপের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব নিউইয়র্ক কনস্যুলেট পরিদর্শনে এলে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা এবং তদন্ত প্রতিবেদন তার নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দোষীদের কনস্যুলেট থেকে বহিস্কার করেন। অভিযুক্ত একজন সহকারী সচিবকে দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতার সঙ্গে বর্তমানে পিৎজার ব্যবসা করছেন। সাদিয়া ফয়জুন্নেসার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।