নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া পার্কের সবুজ চত্ত্বর জীবন্ত হয়ে উঠেছিল আমেরিকা প্রবাসী- কুলাউড়াবাসীর কলকাকলীতে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধবনিতার পদচারণায় মুখর ছিলো পার্কের ছায়াঘেরা সুবিশাল সবুজ গালিচা। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুলাউড়ার সহস্রাধিক মানুষের মিলনে, বনভোজন পরিণত হয়ে উঠেছিল বর্ণাঢ্য উৎসবে। ২৯ জুন রোববার অনুষ্ঠিত এ উৎসবে কুলাউড়া ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটের নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগ দিয়েছিলেন কমিউনিটির নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এ উৎসব আরো বর্ণিল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের একঝাক সাংবাদিক, অভিনয় শিল্পী ও নৃত্যশিল্পীর সরব উপস্থিতিতে। বনভোজনের গ্রান্ড স্পন্সর আমেরিকার প্রাচীনতম সংবাদমাধ্যম ঠিকানার প্রাণপুরুষ এম এম শাহীন, মুশরাত শাহীন ও রুহিন হোসেনের একান্ত উদ্যোগে কুলাউড়াবাসীর সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান বাংলাদেশের সেরা টিভি ব্যক্তিত্ব ও ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দিন, বর্তমানের সময়ের জনপ্রিয় নায়ক তরুণ-তরুণীদের ক্রেজ জায়েদ খান, ৯০ দশকের দেশসেরা নাট্যাভিনেতা ও নায়ক টনি ডায়েস, জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস প্রমুখ।
দিনব্যাপী আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন কুলাউড়ার একঝাক উদ্যমী সংগঠক। বনভোজনের আহ্বায়ক কয়ছর রশীদ, সদস্য সচিব প্রভাষক আফাজুর রহমান চৌধুরী ফাহাদ, প্রধান সমন্বয়কারী এনায়েত হোসেন জালাল, সমন্বয়কারী রেজাউল করিম রেনুর নেতৃত্বে মতিন রেস্টুরেন্টের সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি ছিল নানা আয়োজন। নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও ছিল ছোট শিশু-কিশোরদের ফান গেইম ‘ক্যাসল বাউন্সি হাউজ’।
মঞ্চে অতিথি পরিচয় পর্বে উপস্থাপনা করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও সাংবাদিক কয়ছর রশীদ। একে একে অতিথিদের সম্মান জানানো হয়।
প্রতিক্রিয়ায় টনি ডায়েস বলেন, এই প্রথমবার আমেরিকায় কোনো বনভোজনে অংশ নিচ্ছি। আয়োজকরা দারুণ আয়োজন করেছেন। তবে লক্ষ্য করেছিÑনারীদের সংখ্যা তুলনায় বেশি, পুরুষরা কি বনভোজনে কম আসেন?” তাঁর রসিকতাপূর্ণ বক্তব্যে দর্শকদের হাসির রোল পড়ে। তিনি বলেন, “এই জগতে পুরুষরাই সবচেয়ে দুঃখী, মেয়েরা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়, পুরুষদের তো যাওয়ার জায়গাও নেই!’’
প্রিয়া ডায়েস স্বামীর বক্তব্যের রেশ টেনে বলেন, নারী ছাড়া পুরুষ অসম্পূর্ণ। মেয়েরা যেখানেই যায়, সেখানেই আলো ছড়ায়। তিনি জানান, জীবনে প্রথমবার এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে দারুণ উপভোগ করেছেন।
ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দিন বলেন, এই প্রজন্ম আমাদের আশার আলো। নিউইয়র্কে আজকের তরুণেরা ডাক্তার, ল’ইয়ার, একাউন্টেন্ট-সব পেশায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, তারা এই প্রবাসে নিজের ঠিকানা গড়ে তুলুক, বাংলা সংস্কৃতি ও পরিচয় ধরে রাখুক।
তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন আর হাসির গল্পে হাসে না, হাসে সিরিয়াস কথায়। সময় বদলেছে, তবে আমাদের শিকড়কে ভুললে চলবে না। ঠিকানা সেই শিকড়ের সেতু হতে চায়।
অভিনেতা জায়েদ খান বলেন, আপনারা যেভাবে বাংলা সংস্কৃতি আর লাল-সবুজের পতাকা প্রবাসেও ধরে রেখেছেন, তা অনন্য। প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আপনারাই আমাদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা। আপনাদের টাকায় দেশ চলে-তাই আরও বেশি করে দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানাই।
সিলেটিদের উদারতা আর আতিথেয়তার প্রশংসা করে বলেন, আমি বরিশালের ছেলে, কিন্তু সিলেটিদের যে আন্তরিকতা-তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, রাজনীতিবিদ সাইফুল ইমলাম রহিম, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন্নাহার খান মিতা, জালালাবাদের সাধারণ সম্পাদক আতাউল গণি আসাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজ, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহান খান, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ময়নুজ্জামান চৌধুরী, সহ-সভাপতি মনির উদ্দিন, সহ-সভাপতি হেলিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা আব্দুল বাতিন, আবু সাঈদ আহমেদ, অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, বালাগঞ্জ সমিতির সাবেক সভাপতি বশির আহমেদ, কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও ব্যবসায়ী সানী মোল্লা, কুলাউড়া অ্যাসোসিয়েশন নিউজার্সির সভাপতি সোলেমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমদ, কর্মকর্তা আলমগীর শামীম, মাহবুবুল আম্বিয়া, ফুলতলী ইসলামী সেন্টারের শরীয়ত খান, নিউইয়র্ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবুল বাশার, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা তাহমিনা খুকু প্রমুখ।
সকাল থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। জাবির মোক্তাদির দোয়েল, সায়েদ আলী ও মোসাদ্দেক শিপুর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় ১২টি বিভিন্ন পর্যায়ের ইভেন্ট।
অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহায়তা করেন মাসুক আহমেদ সুজন, আব্দুল আজিজ চৌধুরী, রুমন এ আহেমদ ও জায়েদ আহমেদ তালুকদার। খেলার পাশাপাশি র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করেন এফ মালিক মুরাদ। সহায়তা করেন শওকত হোসেন, আব্দুল জব্বার সিদ্দিকী, রুহুল আমিন।
আগত কুলাউড়াবাসী ও অতিথিদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখেন আব্দুল হান্নান চৌধুরী, লুৎফুর রহমান চৌধুরী, আকদ্দস আলী সিদ্দিকী, বদরুল ইসলাম বদই, নূরুল আম্বিয়া, শফায়েত খান, ইসহাক মিয়া, ফরহাদ হোসেন, মৌলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী, নাহিদুর রব সাজু, আতিকুল হক শাহীন, আশরাফ আহমেদ ইকবাল, মিতা হক, এম এন হক বকুল, আবু সুফিয়ান, সুরুজ মিয়া, আলহাজ্ব আবুল হাসনাত, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মাজহারুল ইসলাম জনি, ইমরুল ইসলাম জেবুল, খন্দকার বাকী প্রমুখ। সহায়তা করেন আব্বাস মিয়া, আবু সালেহ দেলোয়ার, শাহনেওয়াজ, লেনিন, আব্দুল কুদ্দুস সিদ্দিকী, তালুকদার জসিম সিদ্দিকী, সবুজ সিদ্দিকী, খালেদ, লিলু, বাচ্চু, মোস্তাক, মিরন সিদ্দিকী, শেফুল সিদ্দিকী, মান্না, শাহ বেলাল, মো. খালেদ মিয়া, সৈয়দ রাসেল, পারভেজ সিদ্দিক, শাহজাহান প্রমুখ।
উৎসবের শেষপর্বে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন। তিনি বলেন, কুলাউড়ার মানুষ উদার ও কর্মপ্রাণ। আজকের অনুষ্ঠান তার জীবন্ত প্রমাণ। আয়োজক ও পৃষ্ঠপোষকদের আন্তরিকতা এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এ আয়োজন ছিল একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী, যা ভবিষ্যতের পথ দেখাবে।
খেলাধুলা পুরস্কার স্পন্সর করেন কুলাউড়ার সুপরিচিত শিক্ষক আব্দুল মুক্তিাদির খসরু স্যারের সুযোগ্য সন্তান জাবির মুক্তাদির দোয়েল। এছাড়া র্যাফেল ড্র’র স্পন্সর করেন আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সংগঠকরা। সবার শেষে এ আয়োজনে সমাপ্তি ঘোষণা মদিনা মসজিদের বর্তমান সেক্রেটারি আলহাজ্ব এনায়েত হোসেন জালাল।