রাজশাহীতে ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা ঘিরে তোলপাড়

আছেন বিএনপি–জামায়াতের ৫০ জন
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ জুলাই ২০২৫, ০০:০৩

রাজশাহী মহানগরের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে একটি তালিকা—যেখানে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জনকে ‘চাঁদাবাজ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকার সূত্র ধরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। তালিকাটি কে বা কোন সংস্থা তৈরি করেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তালিকায় উল্লেখ করা ১২৩ জনের মধ্যে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার ও সমর্থকসহ মোট ৪৪ জনের নাম রয়েছে। একইভাবে সাবেক ও বর্তমানে নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম রয়েছে। বাকি ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও রাজনৈতিক পরিচয় না থাকায় তাদের ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তালিকায় থাকা ১৮ জনের নাম ইতিমধ্যে এক আবাসন ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায়ও রয়েছে। মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
তালিকাটি পুলিশের, না সরকারের অন্য কোনো সংস্থার—এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিএনপির এক নেতা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তালিকাটি পুলিশের তৈরি এবং এতে পুলিশের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে মানুষের হাতে ঘুরে বেড়ানো কপিগুলোতে পুলিশের স্বাক্ষর নেই।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গাজিউর রহমান বলেন, ‘পুলিশ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তালিকা তৈরি করে থাকে। আমি তালিকাটি দেখিনি। তবে সরকারি কোনো সংস্থার তালিকা এভাবে ছড়িয়ে পড়া উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সত্যিই চাঁদাবাজ হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গণমাধ্যমকর্মীদেরও তথ্য দিয়ে সহায়তা করা উচিত।’
তালিকায় ছাত্রদলের এক নেতাকে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে চাঁদা আদায় করেছেন তিনি। বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। এক সদস্যের বিরুদ্ধে নগরের ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ভুবনমোহন পার্কে তাঁর একটি সাইকেল গ্যারেজ আছে বলেও উল্লেখ রয়েছে।
জামায়াতের একজনকে ‘ক্যাডার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি ভূমি দখল, গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দিয়ে চাঁদা আদায় করেন। অপর একজনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
তালিকায় থাকা একজন ব্যক্তি আগে আওয়ামী লীগে থাকলেও বর্তমানে বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাতে সড়কে এবং নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তালিকাটি দেখে আমি হতবাক। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। দু-একজন জড়িত থাকলেও, এভাবে ঢালাওভাবে নাম দেওয়া ঠিক নয়। বরং চাঁদাবাজদের শনাক্ত করতে হলে দেখা উচিত কারা ৫ আগস্টের পর থেকে মামলা দিয়েছে। হয়তো পাঁচ-দশজন প্রকৃতপক্ষে জড়িত, কিন্তু তারা নাম দিয়েছে ৪০০ জনের। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা অপরাধ নয়।,
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এখন এমনভাবে কাজ করছেন যেন তারা দেশে আবার স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। মুখোশ পরে ভালো মানুষ সাজছেন।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কমিশনার কল রেকর্ডসহ তথ্য দিয়ে তালিকার যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তারা অনেক আগেই সংগঠন থেকে বয়কট হয়েছে। নেতাদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এদের পাশে না থাকেন। তারপরও সুযোগ পেলে তারা ছবি তুলে প্রচার করছে।’
তালিকাটি কে তৈরি করেছে এবং এর ভিত্তি কতটা গ্রহণযোগ্য—তা নিয়ে এখনও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে তালিকাটি রাজশাহীর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে, আর তা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা।