আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলে সরকার পতনের পথ খুঁজছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ শুরু করেছে প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।
বিএনপির কর্মসূচিতে তাদের অন্যতম বড় মিত্র জামায়াতকে দৃশ্যত দেখা না গেলেও নেপথ্যে দলটির ভূমিকা আছে বলে মনে করে সরকার ও সরকারি দল। তাই বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচি, সভা-সমাবেশের প্রতি কড়া নজর রাখছে ক্ষমতা্সীন দল আওয়ামী লীগ।
সরকারি দলের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, জনগণের দোহাই দিয়ে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের মতো বিষয় সামনে এনে মূলত নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত করতে চাইছে।
ইতিমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি, সভা-সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে।
কী করতে চায় বিএনপি, কোন পথে হাঁটছে তারা, বিএনপি কি হরতালের মতো কর্মসূচি দেবে- তা বোঝার চেষ্টা করছে সরকার। বিএনপির কর্মকৌশল থেকে শুরু করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মিত্র খোঁজা- সবকিছুই আওয়ামী লীগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও নজর রাখছে বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন কর্মসূচির ওপর।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও এক বছর চার মাসের বেশি সময় বাকি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার আগেই জোটগতভাবে সরকার পতন করতে মাঠে নামতে চায় একানব্বই-পরবর্তী দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি।
আওয়ামী লীগও মনে করে, নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে রাজনীতির মাঠের উত্তাপ ততই বাড়বে। তাই তারা সতর্ক অবস্থানে থেকে নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭ আগস্ট তারা সারা দেশে বিক্ষোভ দেখাবে। বিএনপির ক্ষমতাকালে ২০০৫ সালের এই দিনে সারাদেশে একযোগে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সোজাসাপটা কথা- শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে সরকার কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জ্বালাও-পুড়াও করলে ছাড় দেবে না, কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাসূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সারা দেশে মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলের নেতাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর যেকোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি রাজপথে মোকাবিলা করা হবে। আমরা রাজপথের পুরনো খেলোয়াড়। বিএনপি তো এই পথে নতুন। খেলা হবে, রাজপথে মোকাবিলা হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, কোনো দল যদি আন্দোলনের নামে জনগণের মনে ভীতিসঞ্চার করতে চায়, আওয়ামী লীগ তা প্রতিরোধ করবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় মাঠে আছে।
বিএনপি সব সময় জ্বালাও-পুড়াও করার ইস্যু খুঁজে বলে মন্তব্য করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে এখন জ্বালানির সংকট, এই বাস্তবতা বুঝতে হবে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে আমাদের নেতাকর্মীরা কঠোরভাবে তা প্রতিহত করবে।’
তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপিকে কোনো বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ- এমনটাই জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আমাদের তরফে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় কঠোরভাবে জবাব দেওয়া হবে।’ এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।