বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান দুরবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি’, ‘আত্মঘাতী চুক্তি’ ও ‘অপরিণামদর্শী’ পরিকল্পনাকে দায়ী করেছে বিএনপি। তারা আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধিতে আইন (বিশেষ বিধান), রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির চুক্তি বাতিল করবেন। একইসঙ্গে দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ১২ দফা পদক্ষেপও তুলে ধরেছে দলটি।
শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও হরিলুটের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এখন শহরে দু-তিন ঘণ্টা ও গ্রামে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে, যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে লোডশেডিংয়ে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যুক্ত হয়েছে। মানুষ আজ দিশেহারা, তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।’
ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের এ বিপর্যয়, রিজার্ভ সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস। এ দায় কাঁধে নিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে আমরা দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবো। আশার বাণী হলো- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবারহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব কালা-কানুন বাতিল করবো। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। উৎপাদনের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন দ্রুত স্থাপন করা হবে। বাপেক্স ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা বঙ্গোপসাগরে সম্ভাবনাময় গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর জ্বালানিনীতি গ্রহণ করবো।’
‘বেইস লোড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্পব্যয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন গড়ে তোলা, বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে’ বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।