জেএমবির সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা

বিচার শেষ হয়নি ১৭ বছরেও

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৩:২৭

জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছরেও চারটি মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক যায়নি। অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের প্রচারণা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা হামলার কৌশল রপ্ত করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ ব্যতীত) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৮টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। ১৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। গ্রেপ্তারকৃত আসামির মধ্যে ২৮১ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদ-ের রায় দেওয়া হয়েছে ১৫ জনকে।
ঢাকা মহানগর আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় ১৮টি মামলা দায়ের হয়। এই ১৮টি মামলায় পুলিশ ও র‌্যাব ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দেয়। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেননি। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এ কারণে ১৪টি মামলায় মাত্র ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। বাকি ৪টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে ১৮টি মামলা ছিল। বর্তমানে ৪টি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না। তারপরও সাক্ষী যা হয়েছে, বা আরও কয়েকটা সাক্ষী নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা আছে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, আসাদুল ইসলাম আরিফসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। জাতিগতভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। এ কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি কার্যক্রম থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাই বলে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। তবে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে খোঁজখবর ও নজরদারি করছি। এটা নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবির কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোনায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আলোচনার বিষয় স্থান করে নেয় জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম। জেএমবির কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। জেএমবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার পায়। পরে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবির দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করে ওই দেশের এনআইয়ে টিম। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হন। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।