ব্রিটেনের রানির বাংলাদেশ সফর

ইতিহাস হয়েছিল শ্রীপুরের যে গ্রাম

শ্রীপুর সংবাদদাতা
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪১
শ্রীপুর রেল স্টেশনে ট্রেন থেকে নামছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফাইল ছবি

১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে শ্রীপুরবাসীর কাছে। এই দিনে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ শ্রীপুরের বৈরাগীর চালা আদর্শ গ্রামে পা রাখেন রানি দীর্ঘ ৩৯ বছর পরও বৈরাগীর চালা আদর্শ গ্রামের মানুষ ভোলেনি রানির স্মৃতি। রানির পদস্পর্শে শ্রীপুরের মাটিতে শুরু হয়েছিল শিল্পায়ন। রানির কল্যাণেই আজ শ্রীপুর শিল্পাঞ্চল। রানির প্রয়াণে গভীর শোকাহত শ্রীপুরবাসী।
সেদিন রানির আগমন উপলক্ষে সেজেছিল শ্রীপুর। শ্রীপুর রেলস্টেশন থেকে বৈরাগীর চালা আদর্শ গ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পিচ ঢালাই করা হয়েছিল। রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছিল গাছের চারা। সাজানো হয়েছিল গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। হেঁটে গ্রাম ঘুরে দেখেন তিনি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তিনি। আর রানিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন শ্রীপুরবাসী।


শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান গড়ে তুলেছিলেন ওই আদর্শ গ্রাম। নিজ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মসজিদ, পোস্ট অফিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রামে ছিল হাঁস-মুরগির খামার, পশু প্রজনন কেন্দ্র, কৃষি সেচের জন্য গভীর নলকূপ ও বিদ্যুৎ সংযোগ।
ঢাকা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুরের পল্লী গ্রামে আসেন রাণী বিশেষ ট্রেনে। লাল গালিচার সংবর্ধনায় বরণ করা হয়েছিল তাকে। সেখান থেকে বিশেষ গাড়িতে আদর্শ গ্রাম বৈরাগীর চালায় যান তিনি। সড়কের দুপাশে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের পতাকা নেড়ে রানিকে স্বাগত জানায়। ‘লং লিভ কুইন’ স্লোগানে মুখরিত ছিল চারদিক। রাস্তার দুপাশে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান রানি।
ঐতিহাসিক ক্ষণে আদর্শ গ্রামে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাকার হয়েছিলেন রানি। গ্রাম ঘুরে রানি দেখেছিলেন মুড়ি ভাজার দৃশ্য। মুড়ির স্বাদও গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
মুগ্ধ হয়েছিলেন পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরা দেখে। দেখেছেন তাঁতের কাপড় বোনা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের দৃশ্যও তাকে মুগ্ধ করেছিল।
তৎকালীন স্বনির্ভর গ্রামের যুবফ্রন্টের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান খান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রানি  আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। গ্রাম ঘুরে দেখেছেন। আজও আমরা রানির স্মৃতি ভূলতে পারিনি। আমরা বৈরাগীর চালা আদর্শ গ্রামের মানুষ রানির মৃত্যুতে শোকাহত। মহারানির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।’
স্বনির্ভর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মো. মিজানুর রহমান খানের ছেলে মো. শাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়ে ছিল। একটি আদর্শ গ্রাম দেখতে রানি বৈরাগীর চালার মতো পল্লীতে এসেছিলেন। রানি গ্রামের মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরা দেখেছিলেন রানি। এ সময় একটি বড় আকৃতির মাছ লাফ দিয়ে রানির পায়ের কাছে এসে পড়েছিল। এ দৃশ্য দেখে রানি তখন হতবাক হয়েছিলেন। আমাদের গ্রামের মানুষ তাকে চিরকাল মনে রাখবে। রানির  আত্মার শান্তি কামনা করি।’
শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কল্যাণে শ্রীপুরের নাম বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে। আমরা রানির স্মৃতি ভুলতে পারবো না। রানির পদচারণায় শ্রীপুরে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। রানির প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ’