সিআইডি তথ্য

হুন্ডিতে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার

নতুনধারা
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০২

অবৈধ হুন্ডি কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেশে ডলারের দাম বাড়াসহ নানা কারণে তদন্ত শুরু করতে গিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। হুন্ডির মাধ‌্যমে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি পাচার করা হয়েছে বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে সংস্থাটির প্রধান মো. আলী মিয়া আরও জানান, এ পাচারের পরিমাণ ডলারে ৭.৮ বিলিয়ন। গ্রেপ্তারকৃতরা গত চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করে। এছাড়া, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে হুন্ডির কারবার করে এমন পাঁচ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের ৫ হাজার এজেন্ট এমএফএস  এর সঙ্গে জড়িত। এই ৫ হাজার এজেন্ট গত চার মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন বিকাশ এজেন্ট, ৩ জন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, ৩ জন বিকাশের ডিএসএস, ২ জন হুন্ডি এজেন্ট, ১ জন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এ দেশ থেকে টাকা পাচার করে আসছে। তাদের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে। গ্রেপ্তার ব‌্যক্তিদের রিমান্ডে চাওয়া হবে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের  গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। 
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়’র MFS এজেন্ট এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়। এই ৫ হাজার এজেন্টের হুন্ডি ব্যবসার কারণে গত চার মাসে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা গত একবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। যা ইউএস ডলারে পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন। সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ MFS এর এজেন্টকে প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা MFS এর এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছে থেকে প্রাপ্ত MFS নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে MFS ব্যবহার করে ক্যাশ ইন’র মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। MFS এর এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে। 
এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(শ)(১৪) ধারা অনুযায়ী সম্পৃক্ত অপরাধ। যা একই আইনের ৪(২) এর ধারায় দণ্ডনীয়। 
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলো- আক্তার হোসেন, দিদারুল আলম সুমন, খোরশেদ আলম ইমন, রুমন কান্তি দাস জয়, রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ, মো. হোসাইনুল কবির, নবীন উল্লাহ, মো. জুনাইদুল হক, আদিবুর রহমান, আসিফ নেওয়াজ, ফরহাদ হোসাইন,    আবদুল বাছির, মাহাবুবুর রহমান সেলিম,    আবদুল আউয়াল সোহাগ, ফজলে রাব্বি ও শামীমা আক্তার।