বিজেপির হ্যাটট্রিক জয়

আত্মতৃপ্তিতে আওয়ামী লীগ, অস্বস্তিতে বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদন
  ১৩ জুন ২০২৪, ১১:৩৭


টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ৭২ মন্ত্রীও শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী। অপর ৪১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে পাঁচজন দপ্তরবিহীন বা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত। মন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ১০ বছর পর জোট সরকার গঠন করতে বাধ্য হতে হলো বিজেপিকে, কারণ এবার নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি দলটি। মোদির প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে জোটের সহযোগী দলগুলো থেকে যথাক্রমে পাঁচ ও চার জন এমপি মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। অন্যদিকে এক দশক পর সংসদের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভায় বিরোধী দল পাচ্ছে ভারত।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলেও মোদির হ্যাটট্রিক জয়ে খুশি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মোদির এই জয়ে বিএনপিতে অস্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মোদির শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ এবং মোদির সঙ্গে আলাদা বৈঠকের গুরুত্ব রয়েছে। তাদের মতে, এটা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মোদি সরকারে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। সেটা বাংলাদেশের নির্বাচনের আগেও দেখা গেছে, সামনেও দেখা যাবে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
১০ জুন সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি। দুই দেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর (মোদি-হাসিনা) নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। শপথের পরপরই নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাদের মধ্যে ভারতের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটির একটি পক্ষ ভারতীয় পণ্য বয়কটের পক্ষে অবস্থান নেয়। ভারতের বিরুদ্ধে এমন অবস্থানের পর তীব্র সমালোচনায় মুখে পড়তে হয় এই নেতাদের। এরপর আস্তে আস্তে ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসছেন দলটির নেতারা। তবে একটি পক্ষ মনে করছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েকজন নেতাকে। তারা ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন।
ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশাকে মর্যাদা দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের নিঃসন্দেহে প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ। আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করব, তাদের দেশে যেভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, এখনো তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে, আমরা ১৯৭১ সালে সেই লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা দেশে গণতন্ত্রকে সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা, সেভাবেই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, টানা দুবার ক্ষমতায় থাকার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। জনগণের বিভিন্ন ইস্যুতে নজর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীর কারণে মোদির জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে। শরিক-নির্ভর সরকারে অনেক আশঙ্কাও রয়েছে, কারণ শরিকরা যদি কখনো অসন্তুষ্ট হয়ে বেরিয়ে যায়, তাহলে সরকারের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।