কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও ক্যাম্পগুলোয় জন্মহার কমছে না। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে পরিবার-পরিকল্পনা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। তবে ‘হেলথ সেক্টর ৪ ডব্লিউ’-এর প্রতিবেদন বলছেÑ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে শুধু ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতেই আট হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়। অতিরিক্ত জন্মহারের কারণে শিশুদের পুষ্টির ঘাটতিসহ নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হলেও কাজটি চ্যালেঞ্জের।
বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৬ জন। এর মধ্যে ৫২ শতাংশই শিশু। তাদের বয়স শূন্য থেকে ১৭ বছর। আর ১১ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। শিবিরে পরিবার আছে দুই লাখ তিন হাজার ২৭১টি।
রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, ৮২ শতাংশ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয় ক্যাম্পের চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলোতে। ফলে প্রকৃত নবজাতকের সংখ্যা আরও বেশি। অধিক জন্মহারের কারণে প্রকট হচ্ছে শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যাও। হেলথ সেক্টর ৪ ডব্লিউর প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ২০ জন প্রসূতি মারা যান। প্রতি লাখ শিশু জন্মদানে এই সংখ্যা ২২৯। এ ছাড়া প্রতি হাজারে ২২ জন নবজাতক মারা যাচ্ছে এবং প্রতি হাজারে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৫ জন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।
সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একাধিক শিশু রয়েছে, যাদের বয়স সাত বছরের কম। ক্যাম্পে অধিকাংশ পুরুষ রোহিঙ্গার একাধিক স্ত্রী রয়েছে। প্রতি স্ত্রীর ঘরে আসছে নতুন শিশু। কারও কারও সন্তান সংখ্যা ৬-৭ জন। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা বাবা-মায়ের মতোই অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশ্রয়শিবিরে কাটছে এসব শিশুর শৈশব। এসব শিশুর মধ্যে অনেকেই ভুগছে মানসিক অশান্তিতে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে অল্প বয়সেই অনেকে জড়িয়ে পড়ছে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ- অতিরিক্ত রেশনের প্রত্যাশা। এক এনজিওকর্মী বলেন, যে পরিবারে যত বেশি
সন্তান, সে পরিবার তত বেশি রেশন পায়। সে কারণে অধিকাংশ পরিবার ২-৫টি পর্যন্ত সন্তান নিয়েছে।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মহার বাংলাদেশিদের তুলনায় বেশি। জনসংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পরিবার-পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জন্মনিয়ন্ত্রণবিষয়ক মিশ্র মতামত পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে পরিবার-পরিকল্পনা গ্রহণ না করার পেছনে ধর্মীয় যুক্তি দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে তাদের মাঝে পরিবার-পরিকল্পনাবিষয়ক সচেতনতাও বাড়ছে। অনেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আসছেন এ সংক্রান্ত সেবার জন্য। এমনই একজন নারী সাকিবার সঙ্গে কথা হয় ক্যাম্প ৪-এ। তিনি জানান, তার তিনটি সন্তান রয়েছে। এদের দুজনেরই জন্ম বাংলাদেশে। তারা আর সন্তান নিতে আগ্রহী নন। এ জন্য নিয়মিত ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরিবার-পরিকল্পনাবিষয়ক সামগ্রী সংগ্রহ করেন। হেলথ সেক্টর ৪ ডব্লিউয়ের তথ্য বলছেÑ চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রথমবারের মতো পরিবার-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।