নাশকতাকারীদের হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ বিটিভি ভবন পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে পেতে সহযোগিতা করুন 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৫:১৮

বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (জুলাই ২৬) সকালে রাজধানীর রামপুরায় সম্প্রতি হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাছে-কানাচে যে যেখানে আছে তাদের খুঁজে বের করুন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো, ঢাকাবাসীকে বলবো, যাদের জন্য আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, যারা ধ্বংস করলো, যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমি তাদের বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি। যারা এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে; তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ এদেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।’


কেউ মিথ্যাচার চালিয়ে যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। (সবাই) আসল সত্যটা জানুক।’
আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে বিটিভি ভবনে যান তিনি। কোটা-সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে হামলাকারীরা যেসব জায়গায় তাণ্ডব চালায় সেসব বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ বর্ণনার সময় বিটিভির কর্মকর্তারা চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এসময় প্রধানমন্ত্রীও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। বিটিভির মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিটিভি ভবনে উন্মত্ত তাণ্ডবের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। এসময় বিটিভি ভবনে ভাঙচুরের একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।
বিটিভিতে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে বিটিভিতে বিভিন্ন উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছি। কিন্তু আজ এত বছর পর এসে দেখা গেল সেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনও দেয়নি। কিন্তু আজ এই টেলিভিশন সেন্টারটাকে যারা এইভাবে পোড়ালো, একটা কিছু নেই যে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এদেশেরই মানুষ? এদের কি এ দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।’
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশটা আমরা অনেক কষ্ট করে স্বাধীন করেছি। আর আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাটাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসযজ্ঞ।’
বিভিন্ন সময় বিটিভিতে আসার কথা স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ অতীতের কথা মনে পড়ে। আমি কতবার এখানে এসেছি! প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।’
এ সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কন্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। এক একটা জিনিস যখন গড়ে তুলি, অনেক কষ্ট করেই করতে হয়। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেটাতো আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি যাতে এগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেশের যে উন্নতি করছি তার সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হবে, সে জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে। এত দিনের এত কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই। আমি তাদের সহযোগিতা চাই।’
পরিদর্শনকালে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম. নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৮ জুলাই বিকালে বিটিভি ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। তারা প্রথমে সেখানে পার্ক করা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। পরে বিটিভি ভবনের ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।