পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্বাভাবিক অবসরে গেলেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের পর এদিন বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে তাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।
এদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শুক্রবার তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সদ্য বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়া নিয়ে তার ফেসবুক আইডিতে দিয়েছেন আবেগঘন এক পোস্ট। পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
“পড়াশোনা শেষ করে যে কর্মজীবন শুরু করেছিলাম, বাংলাদেশের আইজিপি হিসেবে আজ তার যবনিকাপাত হলো। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় আমার ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ তিন পদে দায়িত্বপালনের দুর্লভ সুযোগ হয়েছে।
প্রতিটি পদে কর্তব্যপালনের সময় আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং পেশার প্রতি কঠোর আনুগত্য দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।
দায়িত্ব পালনকালে চেনা-অচেনা, পরিচিত-অপরিচিত দেশের সাধারণ মানুষ আমাকে যে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন তার কোনো প্রতিদান দেয়ার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনোটাই আমার নেই।
চাকরির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমার প্রতিটি সহকর্মীর কাছ থেকে আমি যে সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছি তার জন্য তাদের প্রত্যেকের কাছে আমার অনেক ঋণ। শিখেছি সবার কাছ থেকে। জ্যেষ্ঠ, সতীর্থ, অনুজ বিশেষ করে তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে আজ স্মরণ করতে চাই যারা দীর্ঘ সময়ব্যাপী ‘মেইকিং অভ আ বেনজীর’- এর লক্ষ্যে ব্যক্তিগতভাবে ভূমিকা রেখেছেন।
আরও কৃতজ্ঞতা সব সহকর্মীদের কাছে যারা আমার নির্দেশে জনগণ, দেশ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালন করেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন, কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছেন।
দেশের গণ মানুষের সার্বিক কল্যাণ হোক। আগামীর প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জিতে যাক দেশ। প্রিয় মাতৃভূমিকে অভিবাদন।”
ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ ৩৪ বছর ৭ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেন। আইজিপি হিসেবে ২৮ মাসের কর্মজীবনে বাংলাদেশ পুলিশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাশিত 'জনগণের পুলিশ' এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত 'ভিশন-২০৪১' সালের উন্নত দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন।
তিনি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় পুরো দেশ করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় অচল হয়ে পড়ে। করোনা প্রতিরোধে সম্মুখযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের মানসম্মত চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর ও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করেন তিনি।
বেনজীর আহমেদ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, বিট পুলিশিং এবং পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ এ পাঁচ নীতি ঘোষণা করেন। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশকে ৬ হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং চালু করেন।
এ ছাড়া ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন, পুলিশ কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন, পুলিশ কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত বছরে কমপক্ষে একবার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যানুয়েল, গাইডলাইন ও এসওপি তৈরি, নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস ‘সাইবার সাপোর্ট পর উইমেন ফেসবুক পেজ’, পুলিশের নিজস্ব নিউজ পোর্টাল ‘পুলিশ নিউজ’ ইত্যাদি চালু করেন।
পুলিশ সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে তিনি সব বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালের আধুনিকায়ন করেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে বেশ কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হয়।
ড. বেনজীর আহমেদের সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও কল্যাণমুখী পুলিশিং উত্তরসূরীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।